• পুরশুড়ায় মুখ্যমন্ত্রী দুর্গতদের সঙ্গে কথা
    বর্তমান | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • রামকুমার আচার্য, পুরশুড়া: বাংলার লক্ষ লক্ষ বানভাসি মানুষের দুঃখের জন্য ডিভিসি ও কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই আঙুল তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কয়েকদিন ধরে ডিভিসির ছাড়া জলে আরামবাগ মহকুমায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জলে ভাসছে গ্রামের পর গ্রাম। হুগলির আরামবাগ মহকুমার মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া গরিব মানুষ। বুধবার সেই সব বানভাসি মানুষের সঙ্গে দেখা করতেই কলকাতা থেকে সড়কপথে আরামবাগ মহকুমায় আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় এসে থামে পুরশুড়ায়। দামোদর নদের তীরে বসবাসকারী বাসিন্দারা বানভাসি হয়েছেন। দামোদরও উপচে গিয়ে বইছে। এদিন পুরশুড়ার হরিহর, আঁকড়ি প্রভৃতি এলাকার দুর্গতদের সঙ্গে রাস্তার মাঝেই কথা বলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে বানভাসি মানুষও নানা দাবিদাওয়া জানাতে থাকেন। আবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে না পেরে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশও করেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না, আরামবাগের সংসদ মিতালি বাগ, অসীমা পাত্র সহ পুলিস ও প্রশাসনের আধিকারিকরা।


    দুর্গত মহিলারা জানান, বন্যার তোড়ে বাড়ি ডুবে গিয়েছে। ত্রিপল টাঙিয়ে তাঁরা রাস্তার ধারে এসে বসবাস করছেন। একসঙ্গে সম্মিলিতভাবে ত্রাণ নিয়েও তাঁরা অসন্তোষের কথা জানাতে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের আশ্বস্ত করেন। তারসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, ‘১১ লক্ষ মানুষকে আবাস প্লাসের মাধ্যমে পাকা ঘরের ব্যবস্থা করবেন।’ এরপর মুখ্যমন্ত্রী সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যান। দুর্গতরাও পিছু নেন। দামোদরের জলের স্রোত দেখে মমতা আতঙ্ক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘জলের স্রোত দেখুন। যে কোনও মুহূর্তে সব কিছু ডুবে যাবে।’ 


    মমতার গলায় ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ শোনা যায়। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমি বারবার বলেছি তা সত্ত্বেও নিজেদের রাজ্যকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় সরকারের ডিভিসি এবং ঝাড়খণ্ড সরকার পাঞ্চেত ও তেনুঘাট থেকে জল ছেড়েছে। বাংলায় পুরো জল ছেড়ে দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ আজকে বন্যায় ভাসছে। সাড়ে তিন লক্ষ কিউসেকের উপর জল ছেড়েছে। মানে, ম্যান মেড বন্যা। নিজেদের রাজ্যকে বাঁচাতে পরিকল্পিতভাবে বাংলাকে ডুবিয়েছে। বারবার বলে বলে ফেড আপ হয়ে যাচ্ছি। কেন্দ্রীয় সরকার ডিভিসি ড্রেজিং করে না। তাহলে আরও দু’লক্ষ কিউসেক জল রাখতে পারে। তাছাড়া যখন তোমাদের ৭০-৮০ শতাংশ ভরে, তখন তোমরা কেন ছাড় না? সবটা বাংলার উপরে ঠেলে দাও। বাংলা আর কত বঞ্চনা সহ্য করবে! 


    মুখ্যমন্ত্রী পুরশুড়া থেকে আরামবাগের উদ্দেশে যান। মাঝপথে তিনি হরিণখোলায় মুণ্ডেশ্বরী নদীর ব্রিজে দাঁড়ান। সেখান থেকে প্রত্যক্ষ করেন জলের স্রোত। মুণ্ডেশ্বরী সেখানে দুকূল ছাপিয়ে বইছে। এরপর আরামবাগ শহর হয়ে মুখ্যমন্ত্রী কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মঠে যান। সেখানে মঠে আশীর্বাদ নেন। মঠের বাইরে অনেকের সঙ্গেই দেখা করেন। কামারপুকুরে ফের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঘাটালের দিকে রাস্তা বন্ধ আছে। সব ব্লকে জল আছে। এত জল তো জীবনে ছাড়েনি। কাজেই আমি এখন ঘাটালের দিকে যাচ্ছি। যেখানে খালি পাব সেই জায়গায় থাকব। সেখান থেকে মেচোগ্রাম হয়ে মেদিনীপুর যাব। রাতে মেদিনীপুরে থাকব। বৃহস্পতিবার আমি পাঁশকুড়ার ওদিকে যাব।’ এরপর মুখ্যমন্ত্রী ঘাটালের উদ্দেশে রওনা দেন।
  • Link to this news (বর্তমান)