• দুর্গার সাজে হাত ছোঁয়াতেই মুহূর্তে মূর্ছা, সদাজাগ্রত রায়বাড়ির বুড়িমা
    বর্তমান | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • কুন্তল পাল, বনগাঁ: কোনও কারণে দুর্গার সাজ পছন্দ হয়নি। বিসর্জনের আগে মূর্তির গা থেকে খুলতে গিয়েছিলেন সাজ। মুহূর্তে মূর্ছা গিয়ে মাটিতে পড়ে যান ওই ব্যক্তি। প্রতি বছর রায়বাড়িতে আসতেন নদিয়ার এক মৃৎশিল্পী। বাড়িতে থেকে মূর্তি নির্মাণ করতেন। একবার কোনও এক কারণে বাড়িতে মূর্তি তৈরি হবে না। বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। অন্য কুমোরের ঘরে তৈরি হল দুর্গা মূর্তি। সেটি এবার আনা হবে রায়বাড়িতে। কিন্তু রাস্তায় অকস্মাৎ নানা বিঘ্ন। পুজো ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয় এমন পরিস্থিতি। তারপর আর কোনওদিন বাইরে থেকে প্রতিমা আনার দুঃসাহস দেখায়নি রায়রা। যখন এই অঞ্চলে সেভাবে দুর্গাপুজো কোথাও হতো না তখন রায়বাড়ির পুজো হতো। বহু দূর থেকে মানুষ আসতেন। জাগ্রত দেবীর কাছে মানত করতেন। সকলের মনস্কামনা পূরণ করতেন দুর্গা।


    গোপালনগর বৈরামপুরের রায়বাড়ির দুর্গাপুজো ৪০০ বছরেরও বেশি পুরনো। সে বাড়িতে এখনও সেই প্রাচীন দুর্গাদালান, জোড়া শিবমন্দির, রাধাকৃষ্ণ মন্দির রয়েছে। তবে প্রাচীন ভাস্কর্য উধাও। আধুনিক স্থাপত্যশৈলী দেখা যায়। পুজো অবশ্য হয় প্রাচীন রীতি মেনেই। ঠাকুরের বোধন বেলতলায়। বিসর্জন একই নিয়মে হয়। অতীতে দশমীর দিন আকাশে সন্ধ্যাতারা দেখার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির পুকুরে বিসর্জন হতো। এখন রীতি মেনে সন্ধ্যাতারা দেখার পরই বিসর্জনের ক্ষণ ঠিক হয় বটে তবে রাত একটু গড়ালে দেওয়া হয় নিরঞ্জন। এই দুর্গা ‘বুড়িমা’ নামে পরিচিত। অষ্টমীতে তিনি ফুলকপি ভাজা, আলু ভাজা, সুজির ভোগ পান। ঢাক, ঢোল ও কাঁসর বাজিয়ে পুজো সাঙ্গ হয়। সন্তোষপুরের এক ঢাকি পরিবার বংশ পরম্পরায় ঢাক বাজিয়ে আসছেন এখনও।


    রায় পরিবারের অনেকেই এখন বাইরে থাকেন। পুজোর সময় আসেন গ্রামের বাড়িতে। বর্তমান প্রজন্মের সদস্য সন্তু রায় বলেন, ‘প্রাচীন রীতি মেনে আজও পুজো হয়। তবে অতীতের কোনো নিদর্শন এখন নেই বললেই চলে। মন্দিরগুলিতেও এসেছে আধুনিকতা। সেগুলি বাঁচিয়ে রাখতেই সংস্কার করতে হয়েছে। তবে নিষ্ঠার সঙ্গেই পুজো হয় বুড়িমার।’
  • Link to this news (বর্তমান)