• পান্তা খেয়ে ১৪ আদিবাসীর কাঁধে চেপে কৈলাসে যান বারাসতের গুহবাড়ির উমা
    বর্তমান | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • শ্যামলেন্দু গোস্বামী, বারাসত: ১৮৭৫ সালে গুহ পরিবার তখন বসবাস করছে বাংলাদেশের ফরিদপুরে। একদিন গৃহকর্তা রসিকলাল গুহর স্বপ্নে এলেন মা দুর্গা। ব্রিটিশ আমলে আদালতের কর্মী ছিলেন রসিক। ১৩৭ বছর আগে সে বছর গুহবাড়ি শুরু করল দুর্গাপুজো। তারপর বাংলা ভাগ হল। এপার বাংলায় চলে এল গুহ পরিবার। সে পরিবারের পঞ্চম প্রজন্ম এখন পুজো করছে। এ বাড়িতে দুর্গার সঙ্গে তখন জয়া ও বিজয়াও থাকতেন। কিন্তু এখন তাঁরা থাকেন না। 


    এ পুজোর অন্যতম দর্শনীয় দ্রব্যটি হল দেবীর কাঠামো। সেটি শাল কাঠের তৈরি। দেবীর শয়ানের খাটটিও শাল কাঠের। পুজোর বাসন ও ঘট কাঁসার। দুর্গার সাবেকি ডাকের সাজ। বিসর্জনের পর কাঠামো বাড়িতেই যত্ন করে রাখা হয়। রসিকলালের শুরু করা পুজোর সময় এই কাঠামোটি তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশে যে চৌকির উপরে দেবীকে বসানো হতো সেই চৌকিটিও এখনও রয়েছে। দেবীর ভোগ সম্পূর্ণ নিরামিষ। বৈষ্ণব মতে পুজো হওয়ার কারণে বলি প্রথা নেই। সপ্তমীতে পঞ্চব্যঞ্জনে হয় অন্নভোগ। অষ্টমীতে পোলাও ভোগ। নবমীতে খিচুড়ি। আর দশমীর বিসর্জনের আগে পান্তাভাত। পান্তাভাত তৈরি হয় আতপ চাল দিয়ে। পাথরের থালায় গন্ধরাজ লেবু মিশিয়ে তৈরি হয় পান্তা। সঙ্গে মানকচু সিদ্ধ। দেবীর সামনে বিশাল জল ভর্তি কলসি থাকে। তার নাম ‘জলাধার’। সেই আধারে দেবীর পায়ের প্রতিচ্ছবি দেখে হয় বিসর্জন। ১৪ জন আদিবাসীর কাঁধে চড়ে সন্ধ্যায় বিসর্জন দেওয়ার রীতি। তা দেখতে বহু দূর থেকে মানুষ আসেন বারাসতের কুলুপুকুরে। দুর্গা মূর্তি একচালার। মণ্ডপে দুর্গার পাশে মহাদেব। দুর্গা ও শিব পুজো একসঙ্গে হয়। চেলি পরেন শিব। 


    পরিবারের সদস্য সুমিত গুহ বলেন, ১৯৬১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে হতো পুজো। ’৬২ সাল থেকে বারাসতের শিবানন্দ রোডে পুজো হচ্ছে। ফরিদপুরের কাঠামো, চৌকি, বাসন একইভাবে আজও ব্যবহার হচ্ছে। ১৪ জন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ কাঁধে করে দেবী মূর্তি বিসর্জনের জন্য বয়ে নিয়ে যান। এই রীতি আমাদের বাড়ির গরিমা।’ বিজয়াতে মুখের স্বাদ বদলে পান্তা ভাত, মানকচু ও গন্ধরাজ লেবু খেয়ে কৈলাসে যান উমা।
  • Link to this news (বর্তমান)