• নোটিস না দিয়ে কেন গ্রেপ্তার, কলতান-মামলায় প্রশ্ন কোর্টের
    এই সময় | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • এই সময়: একজন অভিযুক্তের কথার ভিত্তিতে কী ভাবে অন্য একজনকে গ্রেপ্তার করা হলো— সিপিএমের যুবনেতা কলতান দাশগুপ্তের গ্রেপ্তারি সংক্রান্ত মামলায় বুধবার এমনই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ এ দিন এ প্রশ্নও তোলেন যে, কোনও কল চলাকালীন ফোনের এক প্রান্তের ব্যক্তি কিছু বললে তার ভিত্তিতে উল্টোদিকের লোকটিকে কী ভাবে গ্রেপ্তার করা যায়?এ নিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্যকে রিপোর্ট দিয়ে তার বক্তব্য জানাতে হবে। পাশাপাশি ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কলতানকে আগে নোটিস দিয়ে তলব না-করেই গ্রেপ্তার করা হলো, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে পুলিশকে। বুধবার এই মামলায় দীর্ঘ শুনানি হলেও আদালত কোনও রায় দেয়নি। আজই মামলার পরবর্তী শুনানি।

    আরজি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্না কর্মসূচি চলাকালীন গত সপ্তাহে একটি টেলিফোনিক কথোপকথনের অডিয়ো ক্লিপিং (যার সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’) সামনে আনেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। তার ভিত্তিতে সঞ্জীব দাস নামে এক যুবককে প্রথমে কসবার হালতু থেকে গ্রেপ্তার করে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ।

    পরদিন গ্রেপ্তার করা হয় কলতানকে। পুলিশি পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করে এ দিন হাইকোর্টে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ৪৪ জন আইনজীবী কলতানের হয়ে সওয়াল করেন। তাঁদের যুক্তি, পুলিশের এফআইআরে ডাক্তারদের আন্দোলনে গোলমাল পাকানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে অভিযোগে। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে।

    পুলিশ কার কাছ থেকে পেনড্রাইভ সংগ্রহ করেছে, তার কোনও উল্লেখ নেই। কলতানকে✓কোনও নোটিস দেওয়া হয়নি। কলতানকে কেউ ফোন করতেই পারেন, কিন্তু তিনি কাউকে ফোন করেননি। বিকাশের প্রশ্ন, ‘যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেওয়া যায় যে, কলতানের সঙ্গে সঞ্জীব দাসের সঙ্গে কথা হয়েছে, তা হলেও যে মামলায় তিন বছরের কম সাজার বিধান রয়েছে, সেক্ষেত্রে কি নোটিস না দিয়ে গ্রেপ্তার করা যায়?’

    এরপর রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি ভরদ্বাজের প্রশ্ন, ‘কেউ যদি আমাকে ফোন করেন এবং আমি যদি ফোন ধরি, তা হলে যিনি ফোন করেছেন তিনি তাঁর যা ইচ্ছা বলতে পারেন। তার উপর তো আমার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। আমি তো ভয় পাচ্ছি, তা হলে কি কোনও অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন এলে ধরব না!’

    কলতানের আইনজীবী বলেন, ‘একজন ধৃত কারও নাম বললেন আর পুলিশ কণ্ঠস্বর পরীক্ষা না-করে কোনও প্রাথমিক সত্যতা না জেনেই আর একজনকে কী ভাবে গ্রেপ্তার করল?’ রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, ‘ধৃত সঞ্জীব দাস জেরায় কলতান দাশগুপ্তর নাম বলেছেন। দু’জনের কল রেকর্ড খতিয়ে দেখা হয়। সেখানে দেখা গিয়েছে, সঞ্জীবের নম্বর থেকে কলতানের ফোনে কল করা হয়েছিল। সঞ্জীবের বয়ানের ভিত্তিতে কলতানকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

    ✓বিচারপতির প্রশ্ন,✓‘এখনও পর্যন্ত যে তথ্যপ্রমাণ আছে, তার ভিত্তিতে কাউকে কি গ্রেপ্তার করা যায়?’ আদালত আরও প্রশ্ন তোলে, ‘এই দু’জনে কী ধরনের পরিকল্পনা করেছিলেন? তাঁরা হামলা চালাবেন, যাতে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে! তাই তো?কলতান দাশগুপ্তর বিরুদ্ধে অপরাধের কোনও পূর্ব ইতিহাস আছে?’ রাজ্যের যুক্তি, ‘কেউ প্রথম বারের জন্য কোনও অপরাধ করতেই পারেন।’

    আদালতের এই সওয়াল-জবাব নিয়ে কুণাল এ দিন বলেন, ‘এই অডিয়োতে দু’জনেই খারাপ কথা বলেছেন। এখন যদি কোনও বিচারপতির ইচ্ছা হয়, তিনি এত বড় ষড়যন্ত্রের অভিযুক্তকে জামিন দেবেন, দিয়ে দিন! আমরা তো জানি, কোন কোন বেঞ্চ প্রেডিকটেবল বেঞ্চ। তার জন্য এত কথার প্যাঁচ দেওয়ার কী আছে?’

    কলতানের মুক্তির দাবিতে বুধবার রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মিটিং-মিছিল করেছে সিপিএমর ছাত্র-যুব ও মহিলা সংগঠন। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় বড় সভা করেন ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।
  • Link to this news (এই সময়)