বুধবার দুপুরে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরোজিও হলে মিলে গেল সমাজের নানা শ্রেণি। ডাক্তার, অধ্যাপক, শিল্পী, অভিনেতা, ট্রান্স-সমাজকর্মী থেকে শহরের গৃহপরিচারিকাদের সমাবেশে রাজ্যের শাসক দলের সদ্য প্রাক্তন সাংসদ জহর সরকার বললেন, “আমি মনে করি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের প্রেশার গ্রুপ গড়ে তোলায় বাংলা পথ দেখাচ্ছে। এমন দুর্নীতির সিন্ডিকেট বাংলার বাইরেও আছে। তবে এই প্রতিবাদ বাঙালির সচেতন মননের পরিচয়।”
হাওড়ার তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোনালিসা মাইতিকে এই প্রতিবাদের সূত্রেই বৃহত্তর সমাজ চিনেছে। তিনিও সার্বিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখার ডাক দিলেন। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের দুর্নীতি প্রথম যিনি সামনে এনেছিলেন, সেই স্বাস্থ্য আধিকারিক আখতার আলি বা প্রবীণ চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী এই গণজাগরণে অভিভূত।
অভিজিৎ বললেন, “জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন সবার আন্দোলন হয়ে ওঠা অভূতপূর্ব।” শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার মনে করিয়েছেন, “ব্যক্তিজীবনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিবেক সবার জন্যই জরুরি।” প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপিকা সুকন্যা সর্বাধিকারী তাঁর বক্তৃতায় নিহত ডাক্তার ছাত্রী বা অন্য জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কয়েক জন অগ্রজ ডাক্তারের অবিচারের কথা মেলে ধরেন। ডাক্তারদের জন্য আবশ্যিক হিপোক্রেটিসের শপথে অগ্রজ ডাক্তার বা শিক্ষকদের অনুজদের অভিভাবক বলা হয়েছে। সুকন্যার ইঙ্গিত, সেই মূল্যবোধটাই যেন আর জি কর-কাণ্ডে চুরমার। প্রতিবাদের ভাষা গান, নাটক, নাচ, ছবিতেও ফুটে ওঠে।
এক-এক জনের বলার শেষে বার বার পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে বা সুবিচারের দাবিতে স্লোগান ওঠে। এই সম্মেলনে প্রাক্তন সাংসদের অংশগ্রহণ নিয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলে, “বিচার সকলেই চাইছি। কে কী ভাবে চাইবেন, সেটা তাঁর ব্যাপার।” জহর মনে করেন, আর জি কর-কাণ্ডের পরে হয়তো সব রাজ্যের জন্যই ধর্ষণ, খুনের মতো ভয়ানক অপরাধে কার্যবিধি বেঁধে দেবে সুপ্রিম কোর্ট। কাল, শুক্রবার হাইল্যান্ড পার্ক থেকে শ্যামবাজার, নানা মঞ্চ মিলে ২০টি সংগঠনের মশাল মিছিল। শ্যামবাজারেই বিকেলে সেভ ডেমোক্রেসি-ও নাগরিক সমাবেশের ডাক দিয়েছে।