সাধারণত সন্ধ্যার পরে ময়নাতদন্ত এড়িয়ে চলাই দস্তুর। তবু একান্তই সন্ধ্যার পরে তা সম্পন্ন করতেই হলে উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্তাদের কাছ থেকে ছাড়পত্র লাগে। ৯ অগস্ট সন্ধ্যার পরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার ময়নাতদন্ত কেন করা হল? সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানিতেও একাধিক আইনজীবী বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সিবিআইয়ের এক তদন্তকারীর কথায়, “নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার ময়নাতদন্ত করানো এবং দ্বিতীয় বার ময়না তদন্তের সব সম্ভাবনা নির্মূল করে রাতেই দাহকাজের জন্য দেহ মৃতার বাড়ির এলাকায় পাঠিয়ে দিতে স্থানীয় ওসি বা তদন্তকারী অফিসারের উপরে প্রভাবশালীর চাপ ছিল বলে সন্দেহ বাড়ছে। টালা থানার ওসি-র উপরেও প্রভাবশালীরা কলকাঠি নাড়ছিলেন বলে প্রাথমিক ভাবে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।”
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, মৃতদেহ যাতে কোনও ভাবেই দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত করা না যায়, বা প্রকারান্তরে প্রমাণ লোপাটের জন্য অভিজিতের অতি সক্রিয়তার নানা সূত্র পাওয়া গিয়েছে। সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায়, “মৃতার মা, বাবা তো দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের অনুরোধও করেছিলেন। অনায়াসে রাতে মৃতদেহ সংরক্ষণ করা যেত। কিন্তু পুলিশ রাতেই দাহকাজ সারতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তদন্তকারীদের এমন ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জোরালো কারণ রয়েছে।” সিবিআইয়ের বক্তব্য, দেহ ময়নাতদন্ত করা বা না-করা নিয়ে সব সিদ্ধান্ত একা ওসি-র পক্ষে নেওয়া সম্ভব ছিল না। বর্তমানে সিবিআই হেফাজতে থাকা টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের মোবাইলের নথি এ বিষয়ে একটি বড় সূত্র বলে সিবিআই সূত্রে দাবি।
সিবিআই কর্তাদের কথায়, এ ক্ষেত্রে অভিজিৎ এবং মামলার তদন্তকারী অফিসার কী ভাবে ময়নাতদন্ত নিয়ে অতি সক্রিয়তার সাহস দেখালেন, তার হদিস বের করার চেষ্টা হচ্ছে। মামলার তদন্তকারী অফিসার এবং টালা থানার অতিরিক্ত ওসির সঙ্গে ইতিমধ্যে কথাও বলেছে সিবিআই। তাতে কিছু জরুরি তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, ‘মৃতদেহ উদ্ধারের দিন প্রভাবশালীরা সবাই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে বসেছিলেন, এটাও ভাবার কারণ নেই। অনেকে ঘটনাস্থলে যাননি। পর্দার আড়ালে ছিলেন। নেপথ্যে থাকা চরিত্রগুলি কারা? কী তাঁদের ভূমিকা? বা বলা ভাল, তাঁরা কি প্রমাণ লোপাটে সক্রিয়? আর জি করের খুন, ধর্ষণের তদন্তে এটা প্রমাণ করাও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।” খুন, ধর্ষণের প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার নানা আদালতগ্রাহ্য প্রমাণ সংগ্রহ করার কাজ চলছে বলেই এখন সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি।