• বিজেপি অফিসের গেটে জ্বলজ্বল করছে ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক’
    এই সময় | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • মণিপুষ্পক সেনগুপ্ত

    এমন ‘ঘরশত্রু বিভীষণে’র মতো আচরণ! বিজেপির পার্টি অফিস, ২৪ ঘণ্টা সেই অফিস ব্যবহার করছেন আন্দোলনকারীরা। কোথায় কৃতজ্ঞতা বোধ থাকবে তা না, গেরুয়া পার্টির সেই দেওয়ালে কি না এঁকে দেওয়া হচ্ছে কাস্তে-হাতুড়ি! চারদিকে শুধু বিপ্লবের স্লোগান! অফিসে ঢোকার ঠিক মুখে ‘স্প্রে পেইন্ট’ লেখা—বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক! ‘আবহ সঙ্গীতেও’ কমিউনিস্ট-কমিউনিস্ট গন্ধ।বিজেপি অফিসের সামনের চাতালে বসে একদল ছেলে-মেয়ে স্লোগান তুলছেন, ‘আপস না বিপ্লব? বিপ্লব বিপ্লব...।’ শুধু লেনিনের ছবি নেই এই যা রক্ষে। না হলে হয়তো কেউ লিখে দিয়ে যেত, ‘বিপ্লব স্পন্দিত বুকে মনে হয় আমিই লেনিন।’ পার্টি অফিসে ঢুকতে বেরোতে বিজেপি নেতারা দু’বেলা সে সব দেখছেন-শুনছেন। তাঁদের চোয়াল শক্ত হচ্ছে কিন্তু, ‘ফোঁস’ করছেন না। ঢোক গিলে বেমালুম সব কিছু হজম করে নিচ্ছেন।

    এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘আমাদের দেওয়ালে কাস্তে-হাতুড়ি আঁকলেও আন্দোলনকারীরা রাজ্য সরকারের রাতের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে। সেটাই আসল কথা। কাস্তে-হাতুড়ি মুছে ফেলতে আর কতক্ষণ লাগে।’ ফলে পদ্ম-নেতারা আপাতত স্বাস্থ্য ভবনের সামনে থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্না ওঠার অপেক্ষায় দিন গুনছেন। তার পরই পার্টি অফিসের বাইরের দেওয়াল থেকে ‘বিপ্লবের গন্ধ’ মুছে ফের গেরুয়া রং করে দেওয়া হবে। ততদিন না হয়, কাস্তে-হাতুড়ি আঁকা গেট ঠেলেই বিজেপি নেতারা নিজেদের পার্টি অফিসে ঢুকবেন।

    ৯ দিন হয়ে গেল সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্না চালাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সদস্যরাও। রাতভর সেখানে চলছে স্লোগান, স্ট্রিট গ্রাফিতি। আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের ধর্নাস্থলের পাশের গলিতেই রাজ্য বিজেপি দপ্তর। সেখানে এসি ঘরে বসে গেরুয়া নেতারা আন্দোলনের উত্তাপ টের পাচ্ছেন।

    তাঁদের অফিসের সামনের রাস্তায় হাথরস, উন্নাও-এর বিচার চাই লিখে আন্দোলনকারীরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিজেপিকে তাঁরা এ লড়াইতে চান না। যদিও পদ্ম নেতারা নানা ভাবে এই আন্দোলনের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের জন্য পাঠানো হয়েছে জল, ২৪ ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে পার্টি অফিসের সদর দরজা। যাতে রোদ-বৃষ্টিতে চিকিৎসকদের কোনও সমস্যায় পড়তে না হয়।

    কিন্তু সেই সহমর্মিতার কি না এমন প্রতিদান দিলেন আন্দোলনকারীরা? বিমর্ষ মুখে প্রশ্ন তুলছেন বিজেপি নেতারাই। শেষে বিজেপি অফিসের দেওয়ালেই কাস্তে-হাতুড়ি এঁকে দেওয়া হলো! বিজেপির অফিস সেক্রেটারি প্রণয় রায়ের কথায়, ‘অনেক মহিলা চিকিৎসকও আন্দোলনে আছেন। তাঁদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য আমরা পার্টি অফিসে দু’জন মহিলা নিরাপত্তারক্ষীও নিয়োগ করেছি। ওঁদের জন্য পার্টি অফিস খুলে দিয়েছি।

    কিন্তু এটা কী ধরনের ভদ্রতা! আমাদের পার্টি অফিসের গেটে কাস্তে-হাতুড়ি এঁকে দেওয়া হলো। প্রধানমন্ত্রীর ছবি-সহ ফেস্টুনগুলোও লাল রং দিয়ে মুছে ফেলা হয়েছে।’ তাঁর দাবি, ‘আমরা সিসিটিভিতে সব দেখেছি। কিন্তু এ সব নিয়ে জলঘোলা করতে চাই না।’ এক প্রবীণ বিজেপি নেতার মন্তব্য, ‘বাড়িতে কোনও শিশু যখন দেওয়ালে রং করে, আমরা করতে দিই। শিশুটি একটু বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি। তার পর দেওয়াল ফের রং করে দিই। এ ক্ষেত্রেও তাই। ধর্নার মধ্যে দেওয়াল মুছলে ওরা আবার কাস্তে-হাতুড়ি এঁকে দিয়ে যাবে।’

    রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘এ সব আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎকরা করেননি। তাঁদের আন্দোলনে রুটি সেঁকতে আসা কোনও বামপন্থী ছাত্র-সংগঠনের কাজ এ সব।’ সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এ সব কাজ তাঁদের নয়। সংগঠনের রাজ্য সহ-সভাপতি শুভজিৎ সরকারের কথায়, ‘রাজ্যে তৃণমূল যা করে সারা দেশে বিজেপিও তাই করে। গত ১০ বছর ধরে হাথরস, কাঠুয়া, উন্নাও-এর ধর্ষকদের সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধেও পথে নেমেছে বাংলার সাধারণ মানুষ। আমরা মনে করি না যে, কোনও পার্টি অফিসে গিয়ে এ সব করা উচিত। বিজেপি অফিসে কাস্তে-হাতুড়ি আঁকার সঙ্গে আমাদের কোনও যোগ নেই।’ কিন্তু একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হলে মানুষের ক্ষোভ হওয়াটাও সঙ্গত।’

    আগামীতেও বাম ভোট রামে যাবে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে, কিন্তু সল্টলেকে বিজেপির রাজ্য দপ্তর যে ভাবে ‘বামসাজে’ সেজে উঠতে শুরু করেছে, তা দেখে ভুরু কোঁচকাচ্ছেন পথচলতি সাধারণ মানুষ। মজাও পাচ্ছেন অনেকে।
  • Link to this news (এই সময়)