নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া ও সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: দামোদর নদের জলস্তর কমতে থাকায় বড়জোড়ার বাসিন্দারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। জল কমে যাওয়ায় বড়জোড়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বহু জায়গা থেকে জল নেমে যাওয়ায় বাড়িঘর ও চাষের খেতের পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হয়েছে। বড়জোড়ার পাশাপাশি সোনামুখী ব্লক এলাকার পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়েছে।
এদিন জেলাশাসক সিয়াদ এন, পুলিস সুপার বৈভব তেওয়ারি, বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসক প্রসেনজিৎ ঘোষ সোনামুখী ব্লকের বন্যাকবলিত সমিতি মানা গ্রামে যান। আধিকারিকরা জলকাদা টপকে প্রত্যন্ত গ্রামে যান। তাঁরা সেখানে দুর্গত মানুষের হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেন। সোনামুখী ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েত এলাকা এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাধামোহনপুর, ডিহিপাড়া ও পূর্ব নবাসন অঞ্চলের একাধিক গ্রাম দামোদরের জলে প্লাবিত হয়। জল কিছুটা নামায় ওইসব এলাকার বাড়িঘরগুলি বসবাসের যোগ্য হয়েছে। ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া অনেকে এদিন বাড়ি ফিরে যান। তবে এখনও এলাকার বিঘার পর বিঘা ফসলের জমি জলের তলায় রয়েছে।
জেলাশাসক বলেন, বন্যাকবলিত ছ’টি ব্লকে এখনও ৫০টি ত্রাণশিবির চালু রয়েছে। ওইসব শিবিরে প্রায় দু’হাজার দুর্গত রয়েছেন। তাঁদের জন্য খাবার, পানীয় জল, ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্রুত জেলার বন্য পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। দু’-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি। সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির হিসেব কষা চলছে। তা শেষ হলে এব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাবে।
বড়জোড়া ব্লক এলাকার বন্যা কবলিত একাধিক গ্রামে এদিন প্রশাসনের তরফে ত্রাণ বণ্টন করা হয়। বড়জোড়ার বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায়, বাঁকুড়া সদর মহকুমা শাসক অয়ন দত্তগুপ্ত সহ পুলিস প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এদিন দুর্গতদের হাতে নতুন জামাকাপড়, শুকনো খাবার তুলে দেন। বিধায়ক বলেন, বুধবারের তুলনায় এদিন বন্যা পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত হয়েছে। বড়জোড়ার বরিশালপাড়া, পখন্না মানা, সীতারামপুর কলোনি একদিন আগেও জলের তলায় ছিল। এদিন ওইসব এলাকা থেকে জল নেমে যাওয়ায় বাসিন্দারা স্বস্তি পেয়েছেন। স্থানীয় ব্লক প্রশাসন এবং থানার আধিকারিকরা দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ভবিষ্যতে যাতে দুর্গতদের সমস্যা না হয় তা আমরা দেখব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের এব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে জল নামার পর বন্যাকবলিত মাটির বাড়িগুলিতে ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশকিছু পাকা বাড়ির ভিতও নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। ফলে ওইসব বাড়িঘর ভবিষ্যতে বসবাসের পক্ষে উপযুক্ত থাকবে কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে আধিকারিকরা পরামর্শ দিয়েছেন। জল নেমে যাওয়ার পর অনেক সময় ডায়ারিয়ার মতো রোগের প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়। সেদিক থেকেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে স্বাস্থ্য আধিকারিকরা মনে করছেন। বড়জোড়া ও সোনামুখী ব্লকের দামোদর সংলগ্ন পঞ্চায়েত এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিস্থিতির উপর নজর রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।