• আরামবাগে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ
    বর্তমান | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • রামকুমার আচার্য, খানাকুল: ডিভিসির ছাড়া জলে আরামবাগ মহকুমায় বন্যা পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ। কোথাও কোথাও নতুন করে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আবার কোথাও জল কিছুটা নেমেছে। তবে জলমগ্ন এলাকাগুলির মধ্যে খানাকুলের দু’টি ব্লকের অবস্থা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। আরামবাগের সঙ্গে সড়ক পথে খানাকুলের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ফলে প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে নৌকাই ভরসা। রাজ্য সহ নানা গ্রামের রাস্তায় চলছে নৌকা। এমনকী, কৃষি জমিগুলি জলের তলায় চলে যাওয়ায় নৌকায় চেপে পারাপার করছেন অনেকে। যদিও নৌকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তারফলে সমস্যার মধ্যেই পড়ছেন দুর্গতরা। 


    ভয়াবহ অবস্থার কথা স্বীকার করছে প্রশাসনও। আরামবাগের মহকুমা শাসক সুভাষিণী ই বলেন, আরামবাগ, পুরশুড়া, খানাকুল ১ ও ২ ব্লকেই ত্রাণ শিবির চলছে। খানাকুল একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। নদীগুলি এখনও চরম বিপদ সীমার উপর দিয়েই বইছে। তবে জল কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। চারটি ব্লকেই ত্রাণ শিবির চলছে। 


    গত কয়েকদিন ধরে ডিভিসির ছাড়া জলের ভয়ঙ্কর বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আরামবাগ মহকুমায়। আরামবাগ ব্লকের একাংশ মুণ্ডেশ্বরী নদীর জলে প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। প্রতাপনগর রথতলা এলাকায় রাস্তার উপর কোমর সমান জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখানে বহু পরিবারও আটকে রয়েছে। যাতায়াতের কোনও ব্যবস্থাই নেই। বাসিন্দারা বিশেষ প্রয়োজনে জল ডিঙিয়ে যাতায়াত করছেন। অনেকে আবার জরুরি প্রয়োজনে সাঁতরে যাতায়াত করছেন। বিশেষ করে গরিব মানুষ সবচেয়ে অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন। খানাকুলে বহু পাকা ঘরে জল ঢুকে গিয়েছে। তার ফলে গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন বাসিন্দারা। অনেকের একতলা ঘর জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে। 


    খানাকুলে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াল রূপ দেখা গিয়েছে। আরামবাগ থেকে মায়াপুর হয়ে খানাকুল যাওয়ার রাজ্য সড়কে জায়গায় জায়গায় জল জমে রয়েছে। রাধাবল্লভপুরে রাজ্য সড়কের বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে খালের জল বইছে। সেখানে জলের স্রোত অত্যধিক থাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। রুটের বাসও বন্ধ। ঝুঁকি নিয়ে অনেকে জল পেরিয়ে যাতায়াত করছেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা যাতায়াতে সাহায্য করছেন। কিন্তু সেখানে প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেই। ট্রাক্টরের ট্রলিতে চেপে অনেকে পারাপার করার চেষ্টা করছেন। যাত্রী মনীষা কর্মকার, শেখ ইমরান বলেন, খানাকুলের দিকে যাওয়ার জন্য এসেছি। কিন্তু তার মাঝে রাস্তায় এত জল পেরিয়ে যাতায়াত করতে ভয় লাগছে। জানা গিয়েছে, খানাকুলের দু’টি বিডিও অফিস চত্বরে বন্যার জল ঢুকে গিয়েছে। এমনকী, গ্রামীণ হাসপাতালের গেটের সামনেও হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। অন্যান্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও জল ঢুকেছে। ফলে চরম সমস্যায় রয়েছেন খানাকুলের বাসিন্দারা। বাসিন্দারা বলেন, পাকা ঘরের ছাদে বসবাস করছি। কিন্তু ঘরের মধ্যে জলে সাপ ঘুরছে। পুরশুড়াতেও বহু বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়ায় গরিব মানুষ রাস্তার ধারে ত্রিপল খাটিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। জল যন্ত্রণায় ভুগছেন আরামবাগের হরিণখোলা, মলয়পুর এলাকার বাসিন্দারাও। এদিন হরিণখোলা এলাকায় উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে গিয়ে দুর্গতদের ত্রাণ দেন পুরসভার কাউন্সিলার স্বপন নন্দী। এছাড়া হুগলি জেলা পরিষদের তরফেও এদিন বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ বিলি করা হয়। জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরই জেলা পরিষদের তরফে সব জায়গায় ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। থানা ও পঞ্চায়েতের সাহায্যে দুর্গতরা ত্রাণ পাবেন। খানাকুলের বন্দিপুর এলাকার বাসিন্দা মানস দিগার বলেন, বন্যাবিধ্বস্ত বাসিন্দাদের ত্রাণ সামগ্রী প্রয়োজন। মানুষের খাবারে টান পড়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)