• ডিভিসির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান মমতা
    বর্তমান | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • শ্রীকান্ত পড়্যা, পাঁশকুড়া: ডিভিসি রেকর্ড পরিমাণ জল ছাড়ায় বানভাসি দক্ষিণবঙ্গ। পুজোর মুখে বাংলার মানুষের এই দুর্ভোগের জন্য ডিভিসি ও তার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলোধনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তিনি পাঁশকুড়া ব্লকের বন্যা কবলিত মঙ্গলদ্বারি এলাকা পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি আগামী দিনে ডিভিসির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার হুঁশিয়ারি দেন। এর পাশাপাশি তিনি বানভাসিদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির তালিকা প্রশাসনের থেকে চেয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা ফসল বিমার সুবিধা পাবেন বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন। যতদিন প্লাবন পরিস্থিতি থাকবে, ততদিন সরকার ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেবে বলে মুখ্যমন্ত্রী কথা দেন। তার দায়িত্ব তিনি জেলাশাসক এবং পুলিস সুপারদের দিয়েছেন। খরচ যা হবে, সরকার দেবে বলেও দুর্গতদের সামনে প্রশাসনিক অফিসারদের বলে যান।


    এদিন পাঁশকুড়ায় প্লাবিত এলাকায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই বন্যার জন্য ডিভিসি দায়ী। ওরা চার লক্ষ কিউসেকেরও বেশি জল ছেড়েছে, যা এর আগে কোনওদিন হয়নি। আমরা পাঁচ লক্ষ পুকুর কেটেছি। পাঁচশো কোটির চেক জলাধার বানিয়েছি। কেলেঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কার করে অনেক এলাকাকে রক্ষা করেছি। তিনি এদিন ফের বলেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের ডিপিআর করছি। আগামী দু’বছরের মধ্যে করে দেব। তাঁর অভিযোগ, ১০ বছর ধরে ডিভিসি নিয়ে চিঠি পাঠানোর পরও কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও হেলদোল নেই। ডিভিসির জলাধারগুলির জলধারণ ক্ষমতা এখন মাত্র ৩৬ শতাংশ।


    দক্ষিণবঙ্গে এই বন্যার জন্য মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের গাফিলতিকে দায়ী করেন। তাঁর প্রশ্ন, কেন কেন্দ্রীয় সরকার ডিভিসি ড্রেজিং করবে না? কেন ডিভিসির জলে বাংলা ডুববে, তা আমরা জানতে চাই। এর কৈফিয়ৎ চাই। বাংলায় জল ছেড়ে দিয়ে ঝাড়খণ্ডকে রক্ষা করে। এটা ঠিক নয়। ডিভিসির জলে দক্ষিণবঙ্গ ডুবছে। এরসঙ্গে তিনি পাঁশকুড়ার দুর্গতদের সতর্ক করেন। বানভাসিদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতি মুহূর্তে জল বাড়ছে। জলে ঝুঁকি নেবেন না। অন্তত দুটো দিন একটু নিরাপদে থাকুন। প্রশাসনকে বলব, রিলিফ যা দরকার তা দিতে হবে। কেউ যেন অসুবিধার মধ্যে না পড়ে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার বিভিন্ন এলাকাও প্লাবিত। কেশপুর, খড়্গপুর গ্রামীণেরও কিছু এলাকা জলমগ্ন। ডিএম, এসপিরা দায়িত্ব নিয়ে মানুষের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিন। কেউ যেন বলতে না পারে রিলিফ পাইনি। মানুষকে দিন। যা খরচ হবে আমি দেব।


    বৃহস্পতিবার পাঁশকুড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এই মুহূর্তে গোটা শহর জলের তলায়। পাঁশকুড়া ব্লকের গোবিন্দনগর, ঘোষপুর, চৈতন্যপুর-১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত জলের তলায়। পুজোর মুখে ফুলচাষে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। বুধবার রাত ৮টা নাগাদ ডেবরা থানার নন্দবাড়ি এলাকায় কংসাবতী নদীর বাঁধ ভেঙেছে। এরফলে পাঁশকুড়া ব্লকের মাইসোরা ও কেশাপাট নতুন করে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পাঁশকুড়ার নেকড়া-জয়কৃষ্ণপুরে কলকাতা-মুম্বই ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক জলের তলায়। দুপুরের পর ওই জায়গায় কলকাতামুখী লেনে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরফলে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। মঙ্গলদ্বারি থেকে ক্ষীরাই যাওয়ার রাস্তায় কাতারে কাতারে দুর্গত মানুষজন আশ্রয় নিয়েছেন। ত্রাণ শিবিরে বানভাসিদের ভিড় জমেছে। মঙ্গলদ্বারি জুনিয়র হাইস্কুলে বানভাসি মানুষকে দুপুরে রান্না করা খাবার দেওয়া হয়। মেডিক্যাল ক্যাম্প বসানো হয়েছে।


    গোবিন্দনগর পঞ্চায়েতের কয়া গ্রামের সাধন মণ্ডল বলেন, একতলা বাড়ি জলে ডুবে গিয়েছে। অগত্যা বাড়ির ছাদে তাঁবু খাটিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। বিদ্যুৎ নেই। তাই পানীয় জলের সমস্যা মারাত্মক। লালচক গ্রামের সরস্বতী দোলই বলেন, রাত ২টোর সময় বাড়িতে জল ঢোকা শুরু হয়। ওই সময় পরিবারের সকলে লালচক প্রাইমারি স্কুলে আশ্রয় নিই।
  • Link to this news (বর্তমান)