পুরাণের আবহে মিশছে আধুনিক সমাজবার্তা, ফুটছে কথকতা আর কথাকলি
বর্তমান | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
অতিজিৎ চৌধুরী, চুঁচুড়া: পৌরাণিক সময় এখন অতীত। আধুনিক সময় ক্রমশ নিজেকে আধুনিক করে তুলছে। সেখানে মুখ্য হয়ে উঠছে সামাজিক বার্তা। আর আছে শিল্পসংস্কৃতি। সেই পৌরাণিক সময়েও তা ছিল এবং আধুনিক সময়েও আছে। বিশ্বজনীন স্বীকৃতি পাওয়ার আগে থেকেই বাঙালির শারদীয়া পুজোমণ্ডপ মানেই এক গ্লোবাল ভিলেজ, ‘বিশ্বগ্রাম’। থিমপুজো সেই চলতি ধারাতেই দিয়েছে বাড়তি বাতাস। তাই গঙ্গাপাড়ের সাবেক পর্তুগিজ কলোনি থেকে দিনেমার কলোনির পথে ঘাটে পুজো মরশুমে পৌরাণিক থেকে আধুনিক সমাজবার্তা, সংস্কৃতির সম্মিলনের থিমের সমাহার।
আত্মভোলা, কৈলাশবাসী, ভূত-প্রেত-গণ নিয়ে চলা ভস্মমাখা শিবকে নিয়ে পুরাণে অন্তহীন চর্চা। শিবকে বিয়ে দিতে গিয়েও সতীদাহ থেকে মদনভস্ম হয়েছে। বাঙালি পেয়েছে ‘দক্ষযজ্ঞ’ শব্দবন্ধ। শিব-দুর্গা’র বিয়েই এবার শারদীয়ার থিম। সাবেক দিনেমার কলোনি অধুনা শ্রীরামপুরে দেখা যাবে সেই পৌরাণিকের ধারাকথন। সেখানকার নিউ গেট সর্বজনীনের মণ্ডপে এখন বিয়ে নিয়ে হইহই। ৮০ বছরে পা দেওয়া ক্লাবের মণ্ডপে উঠে আসবে কৈলাশ, নানা ফাইবারের মূর্তিতে হাজির হবেন দেবদেবীরা। বিয়ের আসরে দেবী দুর্গা থাকবেন মৃণ্ময়ী হয়ে। বিয়ে বাড়ি, তাই আলোকসজ্জাতেও থাকবে উচ্ছ্বাসের ছোঁয়া। ক্লাব কর্তা সংবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, কালিদাস থেকে মঙ্গলকাব্যের কবিরা নানাভাবে দেখিয়েছেন শিব দুর্গার বিয়েকে। আমরা সেটিকেই ভিন্ন মাত্রায় প্রকাশ করতে চেয়েছি।
পুরাণ হোক বা মঙ্গলকাব্য শিব ও দুর্গার বৈবাহিক জীবনের মধ্যে দর্শন থেকে সামাজিক বার্তাই দিতে চেয়েছে। সেই সমাজবার্তাকেই এবারের পুজোয় থিম করছে সাবেক পর্তুগিজ কলোনি চুঁচুড়ার আজাদ হিন্দ ক্লাব। বর্তমানে বিশ্বজনীন চর্চার বিষয় সবুজায়ন। সবুজের সেই আহ্বানে দেবী দুর্গাকেই বৃক্ষরোপণে হাত লাগাতে হাজির করছেন ক্লাবকর্তারা। একদা ভারতভূমে কৃষির সূচনা হয়েছিল নারীর হাতে। সঙ্গোপন সেই বিবৃতিও কোথাও সঞ্চারিত হয়ে যাবে থিমের মনোহর উদ্ভাসে। দুর্গা থাকবেন আর পৌরাণিক বার্তা থাকবে না, তা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। ফলে, পৌরাণিক আভাসও প্রতিমায় মিলবে। ক্লাব কর্তা বিজয় কাহার বলেন, সামাজিক বার্তার সঙ্গে দর্শকদের চমকে দেওয়ার যাবতীয় আয়োজন আমরা রাখছি।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের অন্যতম মুখ্য ধারা কথাকলি। কেরলের সেই নৃত্যও পুরাণ আধারিত। কথাকলির রংবেরঙের পোশাক, মুদ্রার আঙ্গিকেই থিম গড়েছে কোন্নগরের দক্ষিণপাড়া সর্বজনীন। বেত আর ফাইবারে অনিন্দ্য পুজোমণ্ডপ ইতিমধ্যেই অনেকটা মাথা তুলেছে। পুজোর রাত আরও বর্ণময় করতে থাকছে চন্দননগরের মোহন আলো। পুজো উদ্যোক্তা অসীম মিত্র বলেন, আমাদের প্রতিমায় সাবেক ও আধুনিক ধারার মেলবন্ধন দেখা যাবে।
ফলত, পৌরাণিক থেকে আধুনিক হয়ে সংস্কৃতির সঙ্গে সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে গঙ্গাপাড়ের সাবেক ‘ইউরোপ’।