• ঐতিহ্য হারানো চিঠি-ডাকঘর, বাড়ির সামনে পিওনের ক্রিং ক্রিং, বনগাঁয় পুজোর থিম ‘ইতি তোমার প্রিয়তমা’
    বর্তমান | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • কুন্তল পাল, বনগাঁ: ‘প্রিয় রুদ্র, প্রযত্নে: আকাশ, তুমি আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে বলেছিলে। তুমি কি এখন আকাশ জুড়ে থাক? তুমি কি আকাশে উড়ে বেড়াও? তুলোর মতো, পাখির মতো কি?’ রুদ্রর প্রেমিকা চিঠির উত্তর পাননি হয়তো আজও। আর হয়তো পাবেনও না কোনও দিন। এখন তো চিঠির কদরই নেই। ডাকঘরে গিয়ে তেমন কেউ আর চিঠি পোস্ট করে না। পিওন এসে বাড়ির সামনে সাইকেলের বেল বাজান না। অথচ একটা সময় চিঠিই ছিল মানুষের যোগাযোগের বড় মাধ্যম। হাজারো মানুষের প্রিয়জনের উদ্দেশে লেখা চিঠি আজও বিখ্যাত হয়ে আছে। এবার পুজোয় চিঠি, ডাকঘর, রানার, পোস্টকার্ড প্রভৃতি হারানো ঐতিহ্য তুলে ধরছে বনগাঁ স্পোর্টিং ক্লাব।


    ২৪তম বর্ষে পদার্পণ করেছে বনগাঁ স্পোর্টিং ক্লাব। এবারে তাঁদের পুজোর থিম—‘ইতি তোমার প্রিয়তমা’। মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে ডাকঘরের আদলে। থাকছে ডাকঘর। দেওয়ালে লাগানো একাধিক চিঠির বাক্স। পাশে সাইকেল ও চিঠির বোঝা নিয়ে রানার দাঁড়িয়ে। যত্নে রেখে দেওয়া অতীতের চিঠির বোঝা আমরা সহজেই পুড়িয়ে ফেলি। সেই পোড়া চিঠি ঝুলবে মণ্ডপ জুড়ে। রাতের পর রাত জেগে প্রিয়তমার উদ্দেশে চিঠি লিখতে বসে ভুল হলেই সেটি দলামোচড়া করে ফেলা দেওয়া হয়েছে। সেগুলিও মণ্ডপে জায়গা পেয়েছে।


    ক্লাব সম্পাদক দেবাঞ্জন সাধুর মস্তিষ্ক প্রসূত এই থিম-ভাবনা। তবে তাঁর সেই ভাবনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী হিমেল বিশ্বাস। পেশায় আইনজীবী হলেও শিল্পকে ফুটিয়ে তোলা তাঁর নেশা। শিল্পী আক্ষেপের সুরে জানান, এখনকার প্রজন্ম চিঠি লিখতেই জানে না। বাড়িতে পুরনো চিঠি থাকলেও তা পুড়িয়ে ফেলা হয়। এসবই ফুটে উঠবে এবারের মণ্ডপে। 


    দেবাঞ্জন সাধু বলেন, ‘এখন প্রিয়তমার উদ্দেশে ভালোবাসাও ডিজিট্যাল হয়ে উঠেছে। এখন আর কেউ চিঠি লেখে না।’ তবে তাঁদের আশা আবার কোনোদিন হয়তো জার্মান সুরকার ও পিয়ানো বাদক লুডভিগ ফান বেটোফেনের মতো প্রেমিকার উদ্দেশে প্রেমপত্রে লিখবেন, ‘ভালোবাসা সবকিছুরই দাবিদার। সে দাবির দোহাই রেখেই বলছি, আমি শুধুই তোমার, আর তুমি কেবলই আমার। তোমারই—বেটোফেন।’
  • Link to this news (বর্তমান)