বারাকপুরের কুণ্ডুবাড়ি মা দুর্গাকে বিদায় জানায় কচুশাক আর পান্তাভাত খাইয়ে
বর্তমান | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায়, বারাকপুর : দশমীর দিনে কচুশাক ও পান্তাভাত খাইয়ে মাকে বিদায় জানানো হয়। বারাকপুরের তালপুকুরের কুণ্ডুবাড়িতে দুর্গাপুজোর এটাই ঐতিহ্য। এটা মেনেই বছরের পর বছর ওই বাড়িতে একই নিয়মে পুজো হয়ে আসছে। এবছরও জোরকদমে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। পুজোর সময় পরিবারের সকল সদস্য কুণ্ডুবা়ড়িতে হাজির হন।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বহুবছর আগে দুর্গাপুজোর কয়েকদিন আগে পরিবারের পূর্বসূরি পিয়ারি কুণ্ডু, সুব্রত কুণ্ডুরা বাড়িতে পুজো করার পরিকল্পনা করেন। একদিনের প্রস্তুতিতেই দুর্গাপুজোর সব আয়োজন করে পরিবার। আনা হয় একচালার প্রতিমা। তবে, অল্পসময়ের মধ্যে মণ্ডপ করা সম্ভব হয়নি। ফলে, নিজেদের অনুষ্ঠান বাড়ি ‘আশুতোষ ভিলা’তেই মাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। বছরের পর বছর ধরে পরিবারের উত্তরসূরিরা এখন সেই অনুষ্ঠান বাড়িতেই পুজোর আয়োজন করে যাচ্ছেন।
বাড়ির গৃহবধূ সুজাতা কুণ্ডু বললেন, এই বাড়ির পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, কলাবউ স্নান করাতে যান বাড়ির বিবাহযোগ্য পুরুষেরা। আশ্চর্যের বিষয়, পরবর্তী দুর্গাপুজো আসার আগেই তাঁদের বিয়ে হয়ে যায়। প্রতিবছরই হয় কুমারীপুজো। কুমারীপুজোয় বাইরের মেয়েরাও আসে। পুজো দেখতে ভিড় উপচে পড়ে। দশমীর দিন আমাদের মাকে পান্তাভাত, কচুশাক আর মালশা ভোগ নিবেদন করা হয়। মা আসেন পঞ্চমীতে। ষষ্ঠীতে হয় বোধন। এবার এমন সময় পড়েছে যে অর্চনা খুব চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিষ্টাচার মেনে প্রতিদিনই নানা ধরনের ভোগ হয়। পুজো শেষে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয় গঙ্গায়। প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় বাড়ির মেয়েরাও গঙ্গায় যান। সারাবছর আমরা এই পুজোর জন্য অপেক্ষা করে থাকি। পুজোর সময় এই বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও ভালো লাগে না আমাদের।
পরিবারের অন্য এক সদস্য সনু কুণ্ডু বলেন, আমাদের ৪২ জন সদস্যের যৌথ পরিবার। পুজোর ক’দিন আমাদের কারও বাড়িতে রান্না হয় না। যাবতীয় আয়োজন হয় পুজো মণ্ডপেই। পরিবারের সকলের সঙ্গে পুজোর সময় পাত পেড়ে খাওয়ার আনন্দই অন্যরকম। পুজোয় বাইরের লোকজনও অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের প্রসাদ বিতরণ করা হয়। এবারও বাড়ির পুজোর আয়োজন চলছে জোর কদমে। পরিবারের অনেকে কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন। পুজোর সময় সকলেই বাড়িতে হাজির হবেন। পুজোর ক’দিন পরিবারের সদস্যদের ভিড়েই আমাদের কুণ্ডুবাড়ির ‘আশুতোষ ভিলা’ গমগম করে। এই দিনটিরই জন্য সারাটা বছর অপেক্ষা করে থাকি আমরা।