হস্টেল খালি নির্দেশ 'বিশৃঙ্খলা' বন্ধে ব্যর্থ বিসিকেভি কর্তৃপক্ষের
এই সময় | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এই সময়: নদিয়ার হরিণঘাটায় বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে সব পড়ুয়াকে হস্টেল খালি করার নির্দেশ দিলেন! কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে চরম বিভ্রান্ত ছাত্র-ছাত্রীরা। অনির্দিষ্টকালের জন্যে ফিজিক্যালি পড়াশোনা বন্ধ থাকবে বলেও জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। গোলমালের ভয়ে কোনও পদাধিকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন না বলেও অভিযোগ পড়ুয়াদের। ফলে তাঁদের কোনও সমস্যা হলে তা জানানোর মতো কাউকে পাচ্ছেন না ছাত্রছাত্রীরা।প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের কোন হস্টেলে রাখা হবে, এ নিয়ে দু’দল পড়ুয়ার মধ্যে বিতর্কের জেরে বৃহস্পতিবারে নির্ধারিত অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির বৈঠকও বাতিল করা হয়। আগে তৃণমূলপন্থীরা কর্তৃপক্ষকে ঘেরাও করেছিলেন। এ বার ছাত্রদের পাল্টা গোষ্ঠী সেই একই পথ নেওয়ায় অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন বলে একান্তে জানিয়েছেন কয়েক জন অধ্যাপক।
তবে এত বিশৃঙ্খলার মধ্যেও কেন কর্তৃপক্ষ পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য নিচ্ছেন না, সে প্রশ্ন তুলেছেন পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের একাংশ। উপাচার্যর অবশ্য দাবি, পুলিশকে জানিয়েও সহায়তা মেলেনি। এই আবহেই এ দিন দুপুরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তাপস বিশ্বাসের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কল্যাণী এবং হরিণঘাটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হস্টেল এ দিন বিকেল ৩টে থেকে আজ, শুক্রবার বিকেল ৫টার মধ্যে খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের হস্টেল বদল করার যে পদক্ষেপের কথা ছিল, তাও স্থগিত করার কথা জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের নিরাপত্তার জন্যেই এই সিদ্ধান্ত বলে দাবি। তবে এর ফলে প্রায় দেড় হাজার পড়ুয়া চলতি শিক্ষাবর্ষের মাঝখানে কী ভাবে পঠনপাঠন বন্ধ করে চলে যাবেন, তা নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তির পরেও এ দিন রাত পর্যন্ত অবশ্য ১১টি হস্টেলের অধিকাংশেই পড়ুয়ারা রয়েছেন বলে খবর। বিশেষ করে বিবদমান জগদীশ ও রমন হস্টেলের পড়ুয়ারা মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতাও তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ। অধ্যাপকদের বক্তব্য, ছাত্রদের দু’পক্ষ যে ভাবে সম্মুখ সমরে চলে গিয়েছে, সেই পরিস্থিতি সামাল দিতেই হস্টেল ফাঁকা করার নির্দেশ। আতঙ্কেই অনেক পদাধিকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম সাহা বলেন, ‘আমরা অসহায়। পড়ুয়াদের দু’পক্ষের চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা সামাল দিতে না পেরে আমরা পুলিশ-প্রশাসনকে বারে বারে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনও দিক থেকেই সাড়া মেলেনি। এই অবস্থায় হস্টেল ফাঁকা করার নির্দেশ দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। পড়ুয়ারা হস্টেল ফাঁকা না করলে বা ভিতরে দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল হলেও যে পুলিশ ডাকার ক্ষমতা তাঁর নেই, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন উপাচার্য।
তাঁর অসহায় মন্তব্য, ‘প্রায় ৪০ ঘণ্টা ঘেরাও করে রেখে নিজেদের ইচ্ছেমতো দাবি আদায়ের কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে, এর পরে আমরা আর কী করতে পারি!’
‘আমরা অসহায়। পড়ুয়াদের দু’পক্ষের চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা সামাল দিতে না পেরে আমরা পুলিশ-প্রশাসনকে বারে বারে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনও দিক থেকেই সাড়া মেলেনি। এই অবস্থায় হস্টেল ফাঁকা করার নির্দেশ দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। প্রায় ৪০ ঘণ্টা ঘেরাও করে রেখে নিজেদের ইচ্ছেমতো দাবি আদায়ের কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে, এর পরে আমরা আর কী করতে পারি!’--- গৌতম সাহা। উপাচার্য