• স্টেশন থেকে শিশুকন্যা চুরি, ধরিয়ে দিল সিসিটিভি ফুটেজ
    এই সময় | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • এই সময়, ঝাড়গ্রাম: জানা ছিল না নাম-ঠিকানা। মোবাইল ফোন না থাকায় টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করার উপায়ও ছিল না। ছিল স্রেফ সিসিটিভি ফুটেজ। আর সেটাই ধরিয়ে দিল শিশুকন্যার অপহরণকারীকে। অভিযোগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঝাড়গ্রাম জিআরপি দ্রুত হাওড়া গ্রামীণ জেলা থেকে উদ্ধার করল ৯ মাসের শিশুকন্যাকে। অপহরণকারীর সঙ্গে শিশু বিক্রির ঘটনায় জড়িত দুই মহিলাকেও গ্রেপ্তার করেছে জিআরপি।ঝাড়গ্রাম স্টেশন সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে কাজ করেন ঝাড়গ্রাম থানার ডালকাঠি গ্রামের বাসিন্দা জগৎপতি ভুক্তা। প্রতি দিন স্ত্রী সুস্মিতা ও ৯ মাসের মেয়েকে নিয়ে গ্রাম থেকে স্টেশনে আসেন তিনি। তিনি দোকানে কাজ করার সময়ে মেয়েকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী স্টেশনেই থাকেন। বিকেলে গ্রামে ফিরে যান তাঁরা।

    সুস্মিতা জানিয়েছেন, স্টেশনেই সন্তান ও দৃষ্টিহীন স্ত্রীকে নিয়ে থাকত এক ব্যক্তি। গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা নাগাদ সুস্মিতা ঝাড়গ্রাম জিআরপি-কে জানান, দু’দিন আগে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাওয়ার সময়ে তিনি মেয়েকে ওই ব্যক্তির কাছে রেখে যান। ফিরে এসে দেখেন, তাঁর মেয়েকে নিয়ে গায়েব হয়ে গিয়েছে পরিবারটি। মেয়েকে খুঁজতে খুঁজতে পরবর্তী বড় জংশন খড়্গপুরেও যান তাঁরা। কিন্তু লাভ হয়নি। অভিযোগের ভিত্তিতে ঝাড়গ্রাম জিআরপি ভারতীয় ন্যায় সংহিতার অপহরণের একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে।

    ঝাড়গ্রাম জিআরপি খড়্গপুর জিআরপি জেলার অন্তর্গত। শিশুকন্যাকে অপহরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা জানতে পেরে খড়গপুর জিআরপি একটি তদন্তকারী টিম গঠন করে। ঝাড়গ্রাম স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে চাদরে মুড়ে শিশুকন্যাকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচমাথা মোড় পর্যন্ত সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে জিআরপি জানতে পারে, ওই ব্যক্তি স্টেশন থেকে বেরিয়ে সপরিবারে শিশুকন্যাকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছে। ওই ছবি জিআরপি সমস্ত থানায় পাঠিয়ে দেয়।

    এর পরেই ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া থানা থেকে জানানো হয়, অপহরণকারী ওই ব্যক্তির নাম সঞ্জয় খামরই। তার বাড়ি বেলিয়াবেড়া থানার পিন্ডারাপাল গ্রামে। চুরির মামলায় কয়েক সপ্তাহ আগেই ঝাড়গ্রাম বিশেষ সংশোধনাগার থেকে সে জামিনে মুক্তি পেয়েছে। সঞ্জয়ের মোবাইল ফোন না থাকায় টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করার সুযোগ ছিল না। অগত্যা সোর্স কাজে লাগায় জিআরপি।

    খবর আসে, সঞ্জয়ের মতো একজনকে দিনকয়েক আগে পাঁশকুড়া স্টেশনে দেখা গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে পাঁশকুড়া স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সঞ্জয়কে চিহ্নিত করা হয়। গত বৃহস্পতিবার পাঁশকুড়া জিআরপি এলাকা থেকে সঞ্জয় খামরইকে গ্রেপ্তার করে জিআরপি। তার কাছ থেকে জানা যায়, এক লাখে রফা হলেও পাঁচ হাজার টাকা হাতে পেয়ে সে পাঁশকুড়া পুরসভার কনকপুরের বাসিন্দা রেণুকা দাসের হাতে শিশুকন্যাকে তুলে দিয়েছে।

    রেণুকা শিশুকন্যাকে হাওড়া গ্রামীণ জেলার অন্তর্গত শ্যামপুর থানার বাণেশ্বরপুর গ্রামের বাসিন্দা নিঃসন্তান সোমা রুইদাসের হাতে তুলে দিয়েছিল। রেণুকা ও সোমার মধ্যে আত্মীয়তা রয়েছে বলে জিআরপিকে জানিয়েছে। সত্যিই কি দুই মহিলার মধ্যে আত্মীয়তা রয়েছে নাকি তারা শিশু পাচারের সঙ্গে যুক্ত, তা খতিয়ে দেখছে জিআরপি। জিআরপির খড়গপুর জেলার এসপি দেবশ্রী স্যানাল বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজের সাহায্যে ৯ মাসের শিশুকন্যাকে আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি।’
  • Link to this news (এই সময়)