দশমীতে ইলিশ ভোগ মাস্ট, আজও বিলেত থেকে চাঁদা আসে হুগলির ঘোষাল বাড়ির পুজোয়
প্রতিদিন | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সুমন করাতি, হুগলি: সালটা ১৪৫৪। জমিদারি পান হুগলির ঘোষাল পরিবার। প্রায় সেই সময় থেকেই বাড়ির ঠাকুর দালানে আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গার আরাধনার সূত্রপাত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই পুজো ৫৭০ বর্ষে পদার্পণ করেছে। ইংরেজ আমলে ব্রিটিশ সরকার দ্বারা স্বীকৃতি পেয়েছিল ঘোষাল বাড়ির দুর্গোৎসব।
তৎকালীন সময় ব্রিটিশ সরকারের থেকে বিশেষ অনুদানও আসত এই পুজো করার জন্য। ঘোষাল বাড়ির দুর্গাপুজো বরাবরই শিল্পের পৃষ্ঠপোষক। পুজোর দিনে ঠাকুর দালানে নাটক, যাত্রা পালার আসর বসে। একটা সময় দুর্গাপুজোয় এখানে এসে গান গেয়েছেন ওস্তাদ বুরদুল খান, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো সঙ্গীতশিল্পীরা।
জেলার প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে হুগলির কোন্নগরের ঘোষাল বাড়ির দুর্গাপুজো। আজও পুরনো রীতিমেনেই পুজো হয়। ষষ্ঠীতে মায়ের বোধন থেকে বিসর্জন সবটাই নিয়ম মেনে পালন করা হয়। পুজোর বিশেষত্ব গুলির মধ্যে অন্যতম এই পুজায় বাইরের দোকানের মিষ্টি ব্যবহার করা হয় না। বাড়ির মহিলারা নিজেরাই নাড়ু তৈরি করেন। তাই দিয়েই হয় ঠাকুরের প্রসাদ। অষ্টমীর দিনে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালান বাড়ির পুরুষরা। দশমীর দিন দেবীকে ইলিশ মাছের বিশেষ ভোগ দেওয়ার রীতি রয়েছে। কনকাঞ্জলি দিয়ে বরণ করে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন বাড়ির মহিলারা।
তবে দশমীর দিন সকাল বেলাতেই মায়ের বির্সজন দেওয়া হয়। এর পিছনে রয়েছে পরিবারের দুঃখের কাহিনী। আগে দশমীতে নৌকায় করে মাঝ গঙ্গায় নিয়ে গিয়ে নীলকন্ঠ পাখি উড়িয়ে প্রতিমা বিসর্জন করা হত। সেই সময় পরিবারের এক সদস্য বাঘের আক্রমণের শিকার হন।
সেই থেকেই সকাসল বেলাতেই প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। আর জি কর কাণ্ডের প্রভাব এই বাড়িতেও এসে পড়েছে। তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস মৃত্যু ঘটনার প্রতিবাদে বাড়ির মহিলা ও পুরুষরা মিলে নাট মন্দিরেই মঞ্চস্থ করবেন এক বিশেষ নাটক ‘অপরাজিতা’।
পরিবারের বর্তমান বংশধর প্রবীর ঘোষাল তিনি বলেন, “বাড়ির দুর্গাপুজোকে ঘিরে উৎসবে মেতে ওঠেন সকলে। ইংরেজদের শাসনকালে পুজোর জন্য বিলেত থেকে অনুদান আসত। তৎকালীন সময়ে ৭৫০ টাকা। এই টাকা এতোটাই বিপুল ছিল যে পুরো পুজো হওয়ার পরও টাকা শেষ করা যেত না। তাই ঘোড়ার গাড়ি চেপে শ্রীরামপুরের খাজাঞ্চি খানায় আবারও টাকা ফেরত পাঠাতেন বাড়ির লোকজন। সেই প্রথা এখনও চলে আসছে।”