অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: চোখে স্বপ্নের ভীড়। শরতের নীল আকাশে ছেঁড়া, ছেঁড়া সাদা মেঘের মতো ভাসার ইচ্ছে। তবে পায়ে বাঁধা দারিদের শিকল। যেখানে দুইবেলা ২ খাবার জোগাড় করায় কষ্ট, সেখানে বড় স্বপ্ন দেখা যেন অপরাধ! ছেলেবেলায় বাবাকে হারানোর পর থেকেই স্বপ্ননীল শুনে এসেছে ‘নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে’। এবার দুর্গাপুজোয় (Durga Puja 2024) পরিবারের দুর্গতি দুর করতে প্রতিমা তৈরি করছেন ইসলামপুরের দেবনাথ পাড়ার দেবাশিস সরকার ওরফে স্বপ্ননীল। তা বিক্রিও হয়েছে।
মুর্শিদাবাদের ইসলামপুরের শ্রীকৃষ্ণ চম্পালাল মাহেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া দেবাশিস। সে চক হড়হড়িয়ার দেবনাথপাড়ার বাসিন্দা ছেলেবেলায় বাবাকে হারায়। পরিবারের কাপড়ের ব্যবসা ছিল। বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসাও উঠে যায়। আর্থিক অনটনের দিন কাটে পরিবারের। সেই দুঃস্বপ্নকে সঙ্গী করেই দিন কাটছিল স্বপ্ননীলের। একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে সামান্য বেতনের কাজ করেন মা অনুরাধা সরকার। সঙ্গে দেবাশিসের মামার বাড়ির সাহায্য নিয়ে ছেলেকে নিয়ে ইসলামপুরে পড়ে থাকা। লক্ষ্য প্রতিষ্ঠিত করা।
এই বয়সেই স্বপ্ননীল অনেক কাজে পারদর্শী। ইতিমধ্যেই এবিটিএ আয়োজিত রাজ্য পর্যায়ের অঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন। বিয়ে বাড়িতে কনে সাজানোর কাজেও সে বেশ পটু। এর মধ্যে আবার প্রতিমা গড়াতেও যথেষ্ঠ মুন্সীয়ানার ছাপ রেখেছে।
মা অনুরাধা সরকার বলেন,”ছোটবেলা থেকেই মাটি নিয়ে খেলতে ভালোবাসে ও। খেলার ছলে বাড়িতেই পুজোর জন্য সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করে ফেলে। এর পরই তৈরি করে দুর্গা প্রতিমা। সেই প্রতিমা কয়েক বছর ধরে পাড়ার মণ্ডপে রেখে আসত। গত বছর পছন্দ হওয়ায় পুজো কমিটি কিনে নিয়েছে। এবার তিনটে প্রতিমার বায়না পেয়েছে।”
যদিও ওই শিল্পী চারটে প্রতিমা তৈরি করেছে। হয়তো সেটাও বিক্রি হয়ে যাবে। আর সেটা হলে এবারের পুজোর মরশুমে স্বপ্ননীলের ঝুলিতে ঢুকবে অন্ত্যত দশ হাজার টাকা। জানা গিয়েছে তার তৈরি একটি প্রতিমা যাবে লালবাগের এক মণ্ডপে। বাকি দুটোর একটা বহরমপুরে ও ইসলামপুরে। যে মণ্ডপে থিমের ঠাকুর থাকবে সেখানে পূজিত হবেন স্বপ্ননীলের তৈরি প্রতিমা।
স্বপ্ননীলের কথায়, “জীবনটা যে একটা লড়াই তা আমার দারিদ্র আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে। আর তাই পুজোর কটা দিন একটু ভালো থাকার লক্ষ্য নিয়ে কষ্ট করে প্রতিমা তৈরির বায়না ধরেছি। সফল হলে আগামিদিনে আরও করার ইচ্ছে আছে। তবে পড়াশোনার ক্ষতি করে কিছু করব না। আমাকে বড় হতে হবে।” স্বপ্ননীলের স্বপ্ন আর্ট নিয়ে পড়াশোনা করার।