• কেষ্টর জামিনে খুশির হাওয়া বীরভূমে, সবুজ রসগোল্লা বিলি তৃণমূলের! আবির উড়ল আউশগ্রামেও
    আনন্দবাজার | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সিবিআইয়ের পর গরু পাচার-কাণ্ডে ইডির মামলাতেও জামিন পেলেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। সিবিআই মামলায় তাঁকে জামিন দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত ইডির মামলাতেও জামিন দিয়েছে তাঁকে। দুই মামলাতে জামিন পেয়ে তিহাড় জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন অনুব্রত। সেই খবর বীরভূমে এসে পৌঁছতেই খুশির হাওয়া জেলা তৃণমূলে। প্রায় দু’বছর বীরভূম অনুব্রতহীন। জেলার অনেক তৃণমূল নেতা-কর্মীই তাঁকে ‘অভিভাবক’ মনে করেন। তাঁর তিহাড়-মুক্তির খবরে উচ্ছ্বসিত বীরভূমের তৃণমূল। শুক্রবার বিকেলের পর থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সবুজ রঙের রসগোল্লা বিলি করা হয়েছে, উড়েছে সবুজ আবিরও। শুধু বীরভূম নয়, ‘অকাল হোলি’তে মেতেছে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামও।

    বোলপুর শহরের নিচুপট্টি এলাকার নীলরঙা বাড়িটা একটা সময় ছিল জেলা রাজনীতির কেন্দ্রস্থল। কারণ, বাড়ির মালিকের নাম অনুব্রত। সেই সময় এই বাড়িতে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তো বটেই, সাধারণ মানুষের ভিড় গমগম করত। কিন্তু ২০২২ সালের ১১ অগস্ট এই বাড়ি থেকেই সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন অনুব্রত। তার পর থেকেই খাঁ খাঁ করছে নিচুপট্টির বাড়িটা। থমথমে ভাব ছিল এলাকায়। শুক্রবার অনুব্রতের জামিনের খবরে কাটল সেই ভাব। দুর্গাপুজোর আগেই উৎসবে মেতেছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

    অনুব্রত বীরভূমে তৃণমূল জেলা সভাপতি থাকাকালীন কাজল শেখের সঙ্গে তাঁর ‘মসৃণ’ সম্পর্ক সুবিদিত ছিল। দু’পক্ষের ‘বিরোধ’ও বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। তবে প্রকাশ্যে সব সময়েই দু’জনকে হাসিমুখে দেখা গিয়েছে। গরু পাচার মামলায় অনুব্রত জেলে যাওয়ার পরে দলে কাজলের গুরুত্ব বাড়ে। জেলা সভাপতি পদ শূন্য রেখেই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা কোর কমিটি গড়ে দেন। সেই কমিটির সদস্য তথা বীরভূম জেলা সভাধিপতি কাজলও ‘কেষ্টদা’র জামিনের খবরে খুশি। তিনি আবারও অনুব্রতের গ্রেফতারি এবং জেলবন্দি থাকাকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে মন্তব্য করেন। কাজল বলেন, ‘‘শুধু আমি নই, গোটা বীরভূম জেলার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা আজ আনন্দিত। সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে মিষ্টি বিতরণ হচ্ছে। সব জায়গায় আবির উড়ছে।’’ তার পরই তিনি বলেন, ‘‘কেষ্টদা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। মিথ্যা মামলায় তিহাড় জেলে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল। আমরা জানতাম তিনি এক দিন ফিরে আসবেন। বীরভূম জেলার অধিনায়কের আসনে তিনি ছিলেন। দলনেত্রী বীরভূম জেলার সভাপতির আসন থেকে তাঁকে সরাননি। তিনি এখনও সভাপতি আছেন।’’

    অনুব্রত বীরভূমে ফিরলে কি জেলার রাজনৈতিক পটভূমিকায় পরিবর্তন ঘটবে? কাজল বলেন, ‘‘বীরভূম জেলার দায়িত্বে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। এর পর দলনেত্রী যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই আমরা মানব। কেষ্টদা আমাদের অভিভাবক ছিলেন, আছেন, থাকবেন। আমরা তাঁকে বীরের মতো বরণ করে নেব।’’

    বীরভূমে তৃণমূলের ‘শেষ কথা’ অনুব্রত গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই নিচুপট্টির বাড়িতে নেমে আসে বিষণ্ণতা। অনুব্রতের পর তাঁর অনুব্রতের কন্যা সুকন্যাও গ্রেফতার হন। অনুব্রতের স্ত্রী গত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। ফলে বোলপুরের নিচুপট্টিতে কেষ্টর বাড়ি থাকে তালাবন্ধ। এত দিন ওই বাড়ি ছিল সুনসান। শুক্রবার সেই ছবি পাল্টাল। অনেক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক, অনুগামীদের দেখা গেল ‘দাদা’র বাড়ির সামনে।

    কেষ্টর জামিনে তৃণমূলে খুশির হাওয়া থাকলে জেলা বিজেপি মনে করছে, ‘সময়েই বিচার হবে’। বিজেপি জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘আমরা আইন এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখেই বলছি, আশা করব, সময়েই বিচার হবে।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘তিহাড়ে থেকেই কেষ্টবাবু গুড়-বাতাসার স্বাদ পেয়ে গিয়েছেন। পুজো আসছে, তাই যত তিনি ঢাকের বাজনা শুনবেন, তত তিহাড়ের গুড়-বাতাসার স্বাদের কথা মনে পড়ে যাবে।’’

    বীরভূম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি মিল্টন রশিদ বলেন, ‘‘কেষ্টদা ফিরে এসে সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করবেন। আমি আশা রাখব, আগামী দিনে তাঁর শুভবুদ্ধি জাগবে।’’

    বীরভূমের পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমানেও খুশির হাওয়া তৃণমূলের মধ্যে। শুক্রবার সন্ধ্যায় কেষ্টর জামিনের খবর পৌঁছতেই জেলার আউশগ্রামের তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা উৎসবে মাতেন। সবুজ আবিরের পাশাপাশি পথচলতি মানুষজনকে মিষ্টি মুখও করানো হয়। আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডার বলেন, ‘‘আমাদের নেতা জামিন পেয়েছেন। তাই সকলেই উল্লসিত। শুধু তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা নন, এলাকার সাধারণ মানুষও খুশি।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)