দেব গোস্বামী, বোলপুর: গরু পাচার মামলায় ২ বছর একমাসের মাথায় জামিন পেয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। শুক্রবার বিকেলে এই খবর আসতেই যেন প্রাণ ফিরে পেল জেলা তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। দু’বছরের বেশি সময় ধরে নিষ্প্রাণ কার্যালয়কে যেন সজীব করে তুলল নিমেষে। যে দলীয় কার্যালয় একসময় প্রাণ হারিয়েছিল জেলা সভাপতির জেলযাত্রায়। এই অফিস কক্ষে দোতলার চেয়ারে বসেই জেলার সংগঠন পরিচালনা করতেন অনুব্রতই। সেই কার্যালয় গমগম করে উঠেছে দলীয় কর্মী সমর্থকদের আনাগোনায়। ভিড় করেছেন মন্ত্রী, তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য থেকে নেতা-কর্মী অনুগামী শুভাকাঙ্ক্ষীরাও। আনন্দের রেশ ছড়িয়ে পড়েছে লাভপুর, নানুরেও।
এদিন খবর শোনামাত্রই দলীয় কার্যালয়ে ছুটে এসেছেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলার তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য সুদীপ্ত ঘোষ, প্রাক্তন বিধায়ক নরেশচন্দ্র বাউরি ও গদাধর হাজরা-সহ পাঁচশো কর্মী, সমর্থকরা। অনুব্রত ফিরে আসা নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন অনুগামীরা। তবে দলীয় কোর কমিটি নির্দেশে অনুব্রত বোলপুরে ফিরে না আসা পর্যন্ত উচ্ছ্বাস সংযত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবারের অভিভাবক জেলা সভাপতি ফিরছেন, তাই কেউ জেলার বিভিন্ন জায়গায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন দলীয় কর্মী, সমর্থকরা।
মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ জানান, “দলীয় কর্মী-সমর্থক থেকে সহকর্মীরা প্রত্যেকেই আনন্দিত। জেলার তথা রাজ্যের কর্মীরাও বুকে বল ফিরে পেয়েছে। নামেই জেলা সভাপতি ছিলেন কাজ করতেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। ওঁর অনুপস্থিতিতে পরামর্শ মেনে দুবছরের অধিক সময় দল পরিচালনা হয়ে এসেছে। জেলা সভাপতির চেয়ার ফাঁকা রেখেছি। দলীয় কার্যালয়ে ফিরে আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা।”
শুক্রবার বোলপুরবাসীকে মিষ্টি বিতরণ করেছেন জেলার সভাধিপতি কাজল শেখ। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “সত্যের জয় হল। মিথ্যা ষড়যন্ত্র করে তিহাড় জেলে দীর্ঘদিন আবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। তিনি জেলা সভাপতি ছিলেন, আছেন এবং আগামী দিনেও থাকবেন। সংগঠনকে তিল তিল করে উনি গড়েছেন। পিছিয়ে পড়া বীরভূমকে তিনি এগিয়ে নিয়ে গেছেন। অনুব্রত মণ্ডলের টিম বীরভূম জেলায় ওঁর অনুপস্থিতিতেও কাজ করেছে। দল নির্দেশ দিলে বীরের সম্মান দিয়েই জেলায় ফিরিয়ে আনা হবে অনুব্রত মণ্ডলকে।”
যদিও অনুব্রত জামিন প্রসঙ্গে বিজেপির বীরভূম জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলছেন,” ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। উনি যার জেরে জেলে গিয়েছিলেন সে পথ থেকে তিনি বিরত থাকবেন এই আশা করি। পুজো আসছে চড়াম চড়াম ঢাকে আওয়াজ কিছুদিন পরেই উনি শুনতে পাবেন। তখন বুঝবেন তিহাড়ের গুড় বাতাসা কেমন ছিল।” অন্যদিকে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মিল্টন রশিদের কথায়,” জামিন আসামিদের হক অধিকার। বিচারক নিশ্চয়ই বুঝেছেন তাড়াতাড়ি বিচার হবে না। কিন্তু মামলা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। উনি এতদিনে হয়তো বুঝেছেন অপকর্ম কী জিনিস। তা থেকে শিক্ষা নিয়েই সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসবেন এবং শুভবুদ্ধির উদয় হোক।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষের প্রতিক্রিয়া,” জামিন মানে অপরাধ মুক্ত নয়। তাছাড়া বিপ্লব বা স্বাধীনতা আন্দোলন জেল মুক্তিও নয়। আমরা এই বিষয়টিকে নিয়ে প্রাধান্য দিতেই নারাজ।”