এই সময়, আসানসোল ও সিউড়ি: দিনভর টানাপড়েন, রাজনৈতিক চাপানউতোরের পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলে দেওয়া হলো বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানা। শুরু হলো ট্রাক চলাচল।রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির পিছনে ঝাড়খণ্ডের হাত রয়েছে, অভিযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বৃহস্পতিবার হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে ক্রুদ্ধ মমতা ডিভিসি (দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন)-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানান। একই সঙ্গে ‘ম্যান-মেড’ বন্যার জন্য ঝাড়খণ্ডকে দুষে তাদের সঙ্গে রাজ্যের সব ক’টি সীমানা সিল করে দিতে বলেন।
তার পরেই একে একে বন্ধ হয়ে যায় ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম লাগোয়া ঝাড়খণ্ড চেকপোস্টগুলো। দাঁড়িয়ে পড়ে কয়েক হাজার ট্রাক। দুই রাজ্যের মধ্যে শুরু হয় সংঘাত। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঝাড়খণ্ডমুখী ট্রাকও আটকে দেওয়া হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলে দেওয়া হয়েছে সেই সব সীমানা।
এ দিন সকালে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানার ডুবুরডিহি চেকপোস্টে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক কিমি জুড়ে দাঁড়িয়ে কয়েক হাজার পণ্যবাহী ট্রাক। যানজট সামলাতে নাজেহাল পুলিশ। পাঁশকুড়ার জাতীয় সড়কে জল থাকায় পণ্যবাহী গাড়ি আটক করা হলেও খড়্গপুরগামী যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছিল। রাস্তায় আটকে পড়া লরিচালকদের অভিযোগ, ‘আশপাশে কোথাও খাবার ও পানীয় জল নেই।’
জাতীয় সড়কে প্রায় ৩০ কিমি গাড়ির লম্বা লাইন। সীমানায় ঝাড়খণ্ডের বহড়াগোড়া থেকে ওড়িশার জামশোলা পর্যন্ত সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঝাড়খণ্ড সীমানায় পণ্যবাহী গাড়ি আটকানোর নির্দেশ এসেছিল। শুক্রবার বিকেল চারটে থেকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য গাড়ি ছাড়ার নির্দেশ আসে। পরে সমস্ত গাড়ি ছেড়ে দিতে বলা হয়।’
বিকেলের পরে দুধ, পেঁয়াজ, ওষুধের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের গাড়ি ছাড়া হয়। সন্ধ্যা পৌনে সাতটা নাগাদ মুক্ত হয় সীমানা। চেকপোস্ট বন্ধের খবর শুনে সকালে সীমানায় পৌঁছে ট্রাকচালকদের সঙ্গে কথা বলেন কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার। চেকপোস্টে পৌঁছে সীমানা বন্ধের লিখিত নির্দেশ দেখতে চান। পুলিশ তা দেখাতে না পারলে নিষেধাজ্ঞা না-মেনে গাড়িচালকদের চেকপোস্ট পার করে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিধায়ক।
অজয় বলেন, ‘কোনও রাজ্যই খুশি মতো জাতীয় সড়ক সিল করতে পারে না।’ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, ‘নাসিক, নাগপুর থেকে এই রাস্তা দিয়েই পেঁয়াজ আসে। রাস্তা বন্ধ থাকলে পেঁয়াজের কিলো তিনশো টাকা হবে। আমি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, জাতীয় সড়ক পরিবহণ দপ্তরের কাছে অভিযোগ করব।’
প্রতিবাদ শুরু হয় ঝাড়খণ্ডেও। মার্কসিস্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটি, সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর সদস্যরা ঝাড়খণ্ডের দিকে রাস্তা অবরোধ করেন। দুপুরে আসেন নিরশার প্রাক্তন সিপিআইএমএল (লিবারেশন) বিধায়ক অরূপ চট্টোপাধ্যায়। অভিযোগ করেন, ‘বাংলায় কিছু হলেই সীমানা সিল করে দেওয়া হয়। বাংলার সরকার ঝাড়খণ্ডের মানুষদের কথা ভাবে না। ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে গাড়ি যেতে দেওয়া না হলে আমরাও গাড়ি আসতে দেবো না।’
দুপুরে মাইথন থানায় পৌঁছন নিরশার বর্তমান বিধায়ক অপর্ণা সেনগুপ্ত। কথা বলেন ঝাড়খণ্ডের স্থানীয় ডেপুটি কালেক্টর (ডিসি)-এর সঙ্গে। ক্ষুব্ধ অপর্ণা বলেন, ‘ডিসি জানিয়েছেন সরকারি স্তরে আলোচনা চলছে। ঠিক কী কারণে এই সিদ্ধান্ত, সেটা বুঝতে পারছি না। জলাধার থেকে তো ঝাড়খণ্ড সরকার জল ছাড়ে না। জল ছাড়ে তো ডিভিআরআরসি (দামোদর ভ্যালি রিভার রেগুলেশন কমিটি)। তা হলে কেন এমন আচরণ?’
পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, ‘বিজেপি বিধায়ক-নেতারা সব কিছু নিয়েই রাজনীতি করেন। এটা সরকারি সিদ্ধান্ত। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ ডুবুরডিহি ছাড়াও বৃহস্পতিবার বিকেলের পরে সিল করা হয় বারাবনির রুনাকুড়াঘাট-নলা, কল্যাণেশ্বরী-মাইথন ও রূপনারায়ণপুর সীমানা।