নিষ্কৃতির এখনই কোনও সুযোগ নেই। বরং মাইথন, পাঞ্চেতের ‘জল-যন্ত্রণা’ বাংলাকে ভোগ করতে হবে আরও অন্তত ৭০ বছর। এমনই জানাচ্ছেন ডিভিসি ও ডিভিআরআরসি-র (দামোদর ভ্যালি রিজ়ার্ভার রেগুলেশন কমিটি) কর্তারা।মাইথন ও পাঞ্চেত ড্যামের ছাড়া জলে প্লাবিত হয়েছে দক্ষিণবঙ্গ। বন্যা পরিস্থিতির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি দায়ী করেছেন ঝাড়খণ্ড সরকারকে। ওই দুই জলাধারের সংস্কার কেন করা হয়নি তা নিয়ে তিনি তোপ দেগেছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও।
এমনকী ডিভিসি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথাও বলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, ডিভিসি ও জল ছাড়ার ‘মালিক’ ডিভিআরআরসি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই পরিমাণ বৃষ্টি হলে জল ছাড়তেই হবে। একই সঙ্গে ওই দুই সংস্থা জানিয়েছে, জলাধার সংস্কারে পলি তোলার বিষয়টি বাস্তবে অসম্ভব কাজ।
কেন এমন কথা বলছে এই দুই সংস্থা? শুক্রবার ডিভিসি-র এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর (সিভিল) আঞ্জনি কুমার দুবে ও ডিভিআরআরসির সদস্য সচিব শশী রাকেশ জানান, সাধারণত পৃথিবীর কোনও দেশে ড্যাম বা বাঁধ থেকে এ ভাবে পলি তুলে সংস্কার করা হয় না। কারণ ব্যাখ্যা করে তাঁরা বলেন, ‘এই দু’টি বাঁধ থেকে পলি তুলে সংস্কার করতে গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হবে। সেই অঙ্ক ৪০ হাজার কোটি টাকা। ওই টাকায় নতুন ড্যাম তৈরি হয়ে যাবে।’
এ ছাড়া আরও একটি কারণে ড্যাম সংস্কার কার্যত অসম্ভব বলে মন্তব্য করেন তাঁরা। আঞ্জনি কুমার দুবে বলেন, ‘পাহাড় পরিমাণ পলি বা আবর্জনা তুলে রাখা হবে কোথায়? এর জন্য বিশাল জমি দরকার। ডিভিসি-র হাতে সেই জমিও নেই। আর যদি বাঁধ থেকে পলি তুলে পাশে রাখা হয় তা হলে পরের বৃষ্টিতে সেই পলি ফের জলাধারে এসে মিশবে। এতে শুধু খরচই হবে, লাভ কিছু হবে না।’
বাংলার দুঃখের কারণ হয়ে ওঠা এই দুই বাঁধের আয়ু আর কত দিন? ডিভিসি-র এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর (সিভিল) বলেন, ‘মাইথন ১৯৫৭ সালে ও পাঞ্চেত ১৯৫৯ সালে চালু হয়। তখন বলা হয়েছিল, এই দু’টি বাঁধের আয়ু ১০০ বছর। সেই হিসেবে বাঁধ দু’টির বয়স এখন কমবেশি ৬৫ বছর। অর্থাৎ ১০০ বছরের হিসেবে বাঁধ দু’টির আয়ু আর ৩৫ বছরের মতো।’
তিনি জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক অতীতে অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার ও বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একাধিকবার এই দু’টি জলাধারের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হয়েছে। বলেন, ‘সব কিছু খতিয়ে দেখে ওই বিশেষজ্ঞরা রিপোর্ট দিয়ে বলেছেন ৩৫ বছর নয়, আরও অন্তত ৩৫ বছর অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৭০ বছর বাঁচবে এই দু’টি বাঁধ।’
বাম আমলে আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী প্রস্তাব দিয়েছিলেন, পলি তুলে ইসিএলের পরিত্যক্ত খোলামুখ খনিগুলোয় ফেলা হোক। কিন্তু, সংস্কারের খরচের কথা ভেবে সেই প্রস্তাব কার্যকর হয়নি। তা হলে ফি বছর বাংলায় এই বন্যা কি ভবিতব্য? এর আটকানোর কি কোনও পথ নেই? এই প্রশ্নে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ডিভিসি-র এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর (সিভিল) ও ডিভিআরআরসি-র সদস্য সচিব।