ধর্ষণে অভিযুক্তকে পদচ্যুত করার দাবি মহিলা শিক্ষকদের
এই সময় | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এই সময়: নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগে কেন পুরস্কৃত? জাতীয় মহিলা কমিশন বা জাতীয় তফসিলি কমিশনের চিঠির জবাব কেন বা দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়? প্রতিষ্ঠানে মহিলা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েই বা কী ভাবা হচ্ছে? প্রশ্ন অনেক। কিন্তু উত্তর কে দেবে? কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলা গবেষককে ধর্ষণে অভিযুক্তকে নিয়ে এ বার প্রতিবাদ জানালেন সেখানকার মহিলা শিক্ষকেরা।শুক্রবার তাঁদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। তাতে অভিযুক্ত শিক্ষক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় ক্লিনচিট না-পাওয়া পর্যন্ত বিভাগীয় প্রধান-সহ অন্য পদ থেকে তাঁকে সরানোর দাবি জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের মহিলা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা-সহ কাজের অনুকূল পরিবেশ তৈরির দাবিও জানানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অমলেন্দু ভুঁইয়া জানিয়েছেন, যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে। সূত্রের খবর, তাঁর বিভাগের আরও দু’-তিন জন গবেষক বিবেকানন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেও রহস্যজনক ভাবে তাঁরা তা প্রত্যাহার করে নেন। অভিযোগ, চাপ দিয়ে তাঁদের তা প্রত্যাহার করানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজ়্যুয়াল আর্টস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তথা বিভাগীয় প্রধান বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন তাঁরই অধীনে গবেষণারত এক মহিলা। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে সাসপেন্ড এবং বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়াও একাধিক সুপারিশ করা হয়েছিল।
কিন্তু তৎকালীন উপাচার্য অভিযোগকারীর গাইড পরিবর্তন করা ছাড়া আরও কোনও সুপারিশ কার্যকর করেননি। মাঝে বিভাগীয় প্রধানের পদ গেলেও সম্প্রতি ফের তাঁকে বিভাগীয় প্রধানের পদে বসানোর পাশাপাশি এগজ়িকিউটিভ কমিটির সদস্যও করা হয়েছে। তার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালেয়র শিক্ষকদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ ছড়ায়।
এ দিকে বিচার না পেয়ে রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, জাতীয় মহিলা কমিশন, জাতীয় তফিসিলি জাতি ও জনজাতি কমিশনে অভিযোগ জানান ওই গবেষক। তার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয় দু’বার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় তার কোনও জবাব না-পাঠানোয় শুক্রবারেও ফের বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছে দুই কমিশন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ধর্ষণের অভিযোগ হওয়ার পরে তিন গবেষক বেশ কিছু অভিযোগ তুলে বিবেকানন্দের অধীনে গবেষণা করতে আপত্তি জানিয়ে চিঠি দেন। কিন্তু কেন তাঁরা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিলেন, সে বিষয়ে এখনও রহস্য রয়েছে। তবে সেখানকার শিক্ষকেরা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় পদক্ষেপ করলে অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন।
উপাচার্য জানান, অভিযোগ হয়েছিল আগের উপাচার্যের সময়ে। তিনি দায়িত্ব নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করেন। সেই কমিটির রিপোর্ট হাতে পেতে দেরি হওয়ায় দুই কমিশনে রিপোর্ট পাঠাতে দেরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি কিন্তু পরে রিপোর্ট পাঠিয়েছি। কমিশন কেন এমন বলছে আমি জানি না।’ অভিযোগ ও পদক্ষেপের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মহিলা শিক্ষকেরা কিছু দাবি করেছেন। তা ছাড়া ওই গবেষকের অভিযোগের ভিত্তিতে কমিটির একটা রিপোর্টও আমার হাতে এসেছে। সেগুলির ভিত্তিতে পদক্ষেপ অবশ্যই করা হবে।’