• চারদিনই হোমের রীতি, দশমীর ভোগে পান্তা! দেশভাগের ছায়া নদিয়ার রায়চৌধুরীদের পুজোয়
    প্রতিদিন | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: ভরা মুঘল শাসন। তৎকালীন পূর্ব বাংলার মহেশপুর গ্রামে পুজো শুরু করেন রায়চৌধুরীরা। উপাধি লাভের পর মহেশপুরের জমিদাররা ভীষণ আনন্দিত হয়েছিলেন। উপাধি লাভের আনন্দ পুজোর মধ্যে ভাগ করে নিতে তৎকালীন জমিদার বড় সরকার দুর্গাপুজো (Bonedi Barir Durga Puja) করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই শুরু। আজ অবশ্য মহেশপুরের সেই জমিদার নেই। নেই সেই ঠাঁট বাটও। তবে পুজোতে কোনও ছেদ পড়েনি। 

    দীর্ঘ সময়কালে গঙ্গা থেকে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। এই স্বাক্ষী থেকেছে একের পর এক ঐতিহাসিক ঘটনার।  মুঘলদের পতন। ইংরেজদের ২০০ বছরের শাসন। দেশ ভাগ। একের পর এক যুগ পেরিয়েছে বন্ধ হয়নি এই পুজো। বর্তমানে সীমানার ওপারে বাংলাদেশের যশোহর জেলার মহেশপুর গ্রাম। এপারে ভারতের নদীয়া জেলার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের পাবাখালি গ্রাম। মাঝখানের কাঁটাতারের বেড়া দুই দেশের সীমানা নির্ধারণ করেছে। রায়চৌধুরীদের বাড়ি দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল মহেশপুর গ্রামে। দেশভাগের পর রায়চৌধুরী পরিবারের গৃহকর্তা শিবপ্রসাদ রায়চৌধুরী ওরফে পাঁচু গোপাল রায় ভারতে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। পাবাখালির মতুল্য দারোগার সঙ্গে জমি-জায়গা বিনিময় করেন তিনি। মতুল্য দারোগা ছিলেন মুসলিম। অন্য ধর্মীয় বাড়িতে আশ্রয়ের ফলে কিছুটা সমস্যায় পড়লেও পুজো বন্ধ হয়নি। মতুল্য দারোগার বাড়ির উঠোনে চার চালা তৈরি করেই ১৯৪৯ সালে ভারতে নতুন করে পুজো শুরু হয়।

    এই পুজোর অনন্য ইতিহাসের সঙ্গে মায়ের রূপ ও রীতি চমকে দেওয়ার মতো। দেবী রূপে দশভূজা হলেও দ্বিভূজা নামে পূজিত হন। দূর থেকে দেখলে মনে হয় দেবীর দুটি হাত। কিন্তু চুলের পিছনে ছোট ছোট আটটি হাত থাকে। দেবীর ডান হাতে ত্রিশূল আর বাঁ হাতে সাপের লেজ। দেবী প্রতিমার মাথার উপর চালচিত্রের বদলে তৃতীয়ার চাঁদের মত চালি।

    দ্বিভুজা দুর্গাপুজোর পদ্ধতি ও ভোগে রয়েছে নানা বৈচিত্র। পয়লা বৈশাখে ভগবতী যাত্রার দিন প্রতিমার পাঠপুজো করা হয়ে থাকে। রথের দিন প্রতিমার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ষষ্ঠীর দিন দেবীর বোধন। সেই দিনই জ্বালানো হয় হোমের আগুন। চারদিনই হোম হয়। চণ্ডী মণ্ডপে প্রজ্বলিত এক মোমবাতির শিকার সংকেত মেনে অষ্টমীর সন্ধিপুজো হয়। পুজোর চারদিন চণ্ডীপাঠ হয়ে থাকে।

    ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতিদিন চারবার ভোগ দেওয়ার রীতি রয়েছে এই বাড়িতে। সকালে পাঁচরকম ভাজা,পঞ্চব্যঞ্জন দিয়ে খিচুড়ি ভোগ। দুপুরে মাসকলাইয়ের ডাল, বিভিন্ন রকম তরকারি দিয়ে অন্নভোগ। বিকেলে দেওয়া হয় পায়েসভোগ। সন্ধ্যা আরতির পরে লুচি, সন্দেশ, মোয়া, নাড়ুর ভোগ নিবেদন হয়। দশমীর দিন দেবীকে দেওয়া হয় পান্তা ভোগ। এদিন মহাদেবকে দেওয়া হয় তামাক। দশমীতে দেবীর প্রতিমাকে কাঁধে করে নিয়ে গিয়ে শিবনীবাসের চূর্ণী নদীর জলে নিরঞ্জন দেওয়া হয়।
  • Link to this news (প্রতিদিন)