ডিভিসি জল ছাড়া কমিয়েছে। ফলে, ধীরে হলেও আরামবাগ মহকুমার আরামবাগ, পুরশুড়া ও গোঘাটের একাংশ থেকে জল নামতে শুরু করেছে। কিন্তু রূপনারায়ণ নদ টইটম্বুর থাকায় খানাকুলের দু’টি ব্লকের পরিস্থিতির কোনও উন্নতিই হয়নি। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও বিচ্ছিন্ন। জলমগ্ন এলাকাগুলি বিদ্যুৎহীন হয়েই রয়েছে। এই বিপর্যয়ে বৃহস্পতিবার থেকে মহকুমায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। ত্রাণ নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে। ত্রাণের দাবিতে শুক্রবার খানাকুল ১ ব্লকের পোল ২ পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে পুরশুড়ায় দামোদর নদে তলিয়ে মৃত্যু হয় স্থানীয় মাইতিপাড়ার বাসিন্দা সুশান্ত মাইতির (৪৯)। শৌচকর্মে গিয়ে তিনি তলিয়ে যান বলে পুলিশের অনুমান। বৃহস্পতিবার সকালে খানাকুলের বলাইচকের কয়েক জন মহিলা মুণ্ডেশ্বরী নদীর ভাঙন দেখতে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে সুলোচনা মণ্ডল (২০) জমির আল থেকে পা পিছলে স্রোতের মুখে পড়ে তলিয়ে গিয়েছিলেন। শুক্রবার তাঁর দেহ মেলে পাশের গ্রামে। বৃহস্পতিবারই খানাকুলের তাঁতিশালে জলমগ্ন বাড়ির সামনে খেলার সময় ডুবে মৃত্যু হয় শ্রুতি বাগ (২) নামে একটি শিশুর। সে দিন তাঁতিশালেরই মুন্সিপাড়ায় ১৪ বছরের এক কিশোরের মৃত্যু হয় জলে ডুবে। শুক্রবার তাঁর দেহ মেলে।
খানাকুল থেকে কবে জল নামবে, তা ভেবে পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ায় খানাকুল ১ ব্লকের বীরলোক সংলগ্ন রাস্তার যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে ঠাঁই নিয়েছেন দিনমজুর মেনকা মুদি। দুপুরে জা লক্ষ্মীকে নিয়ে সেখানেই ইট দিয়ে উনুন বানিয়ে ভাত ফোটাচ্ছিলেন। জানালেন ভাতের সঙ্গে আলুসিদ্ধ ও শাকভাজা দিয়েই চালিয়ে নেবেন। জ্বালানি হিসেবে পাটকাঠি এনেছে পড়শির বাড়ি থেকে।
মেনকার অভিযোগ, “ত্রাণ বলতে মিলছে পানীয় জলের পাউটচ। সেটাও এক কোমর জল ভেঙে রামনগর থেকে আনতে হচ্ছে। বাকি জলের কাজ এবং স্নান সব বন্যার পচা জলেই সারতে হচ্ছে। শুকনো খাবার-দাবার কিছুই মেলেনি।” ওই ব্লকেরই গোপালনগর গ্রামের বৃদ্ধ শেখ আবদুল্লার ক্ষোভ আরও প্রবল, ‘‘জলটুকু ছাড়া কোনও ত্রাণ পাইনি। জনপ্রতিনিধি বা প্রশসানের লোকেরাও কেউ আসেননি। কোনও পরিষেবাই নেই।’’
ত্রাণ নিয়ে এমন ক্ষোভ খানাকুল ২, পুরশুড়া ব্লকেও শোনা যাচ্ছে। মহকুমাশাসক (আরামবাগ) সুভাষিণী ই মানছেন, যোগোযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় খানাকুলের দু’টি ব্লকে ত্রাণ পৌঁছতে কিছুটা অসুবিধা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বেশ কিছু জায়গায় ট্রাক্টর বা নৌকাতেও ত্রাণ নিয়ে যাওয়া যাচ্ছিল না। তবে, এ দিন প্রায় সব জায়গায় ত্রাণ পৌঁছে দিতে পেরেছি। নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।আশা করছি, কাল রূপনায়ারণের জল নামবে। খানাকুলের পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”
অন্যদিকে, জাঙ্গিপাড়া থেকেও জল নামতে শুরু করেছে। এখানকার একাধিক পঞ্চায়েত এলাকা জলমগ্ন হয়েছিল। বিধায়ক তথা পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানান, বেশ কিছু পরিবারকে ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে আনতে হয়। প্রশাসনের তরফে সবাইকেই প্রয়োজনীয় সাহায্যকরা হয়েছে।