২৪ ঘণ্টার ফারাক। বৃহস্পতিবার পাঁশকুড়ার যে জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি দেখতে জলে নেমেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শুক্রবার ঠিক সেখানেই পৌঁছলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ত্রাণ বিলি করলেন, ভাঙা বাড়ির মালিককে অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন। সেই সঙ্গে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে চলল রাজ্য সরকারের সমালোচনা। কিন্তু নিজের জেলায় যেখানে বন্যা পরিস্থিতি, সেখানে শুভেন্দুর পাঁশকুড়ায় পৌঁছতে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগল কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল।
মুখ্যমন্ত্রী আসার আগেও বুধবার পাঁশকুড়ার মঙ্গলদ্বারিতে ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছিল। এ দিন ফের ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন দুর্গতরা। তারপর শুক্রবার দুপুর দু’টোয় শুভেন্দুর কনভয় আসে পাঁশকুড়া পিডব্লিউডি মাঠে। সেখান থেকে বিজেপি নেতা সিন্টু সেনাপতির বাইকে পাঁশকুড়া পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের জন্দড়ায় ভাঙনস্থল পরিদর্শনে যান শুভেন্দু। তার অদূরে জলের তোড়ে একটি দোতলা পাকাবাড়ি উল্টে গিয়েছিল। ওই বাড়ির মালিক স্থানীয় গণেশচন্দ্র ভুঁইয়া এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করেন বিরোধী দলনেতা। তাঁরা অভিযোগ করেন, বাঁধের ধস আটকাতে সেচ দফতরের জানিয়েছিলেন। সেচ দফতরের ঠিকাদার কয়েকটি বস্তা দিয়ে চলে যান। বাঁধ মেরামত করেনি। ওই পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেন শুভেন্দু।
তবে শুধু মমতা নন, শুভেন্দুর আগে পাঁশকুড়ার বন্যাবিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও। যদিও শুভেন্দু এ দিন বলেন, ‘‘মেদিনীপুরে লোক মানেই আমার আত্মীয়। তবে আমি সরকার নই। বন্যার প্রথম থেকে যতটা পেরেছি এলাকার জন্য করেছি। পশ্চিমবঙ্গে ঠিকাদাররা তিন বছর ধরে কোনও টাকা পাননি। তাঁরা কাজ করবেন কী ভাবে?’’ জন্দড়া থেকে শুভেন্দু যান মঙ্গলদ্বারিতে। সেখানে এনডিআরএফ কর্মীদের কাছে উদ্ধার কাজ নিয়ে খোঁজ খবর নেন। ঘুরে দেখেন দুর্গত এলাকা। যাতায়াতের পথে সাধারণ মানুষ এবং দুর্গতদের সাথে কথা বলেন। পাঁশকুড়ায় দুর্গতদের মধ্যে এ দিন ত্রিপলও বিলি করেন তিনি।
শুভেন্দু আসার আগে মঙ্গলদ্বারিতে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন দুর্গতরা। শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘ত্রাণ কোথায়? আমি আসব বলে পুলিশ জাতীয় সড়ক থেকে টাকা তুলে, লোকের থেকে ঘুষ নিয়ে তৃণমূলের লোক নিয়ে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ত্রিপল বিলি করেছে। বিডিও অফিসে, পুরসভায় পর্যাপ্ত ত্রিপল আসেনি। আমি বলব রাস্তা না ঘিরে বিডিও অফিস, পুরসভা ঘেরাও করুন। ঠিক জায়গায় ঘিরুন।’’
শুভেন্দুর পাঁশকুড়া সফরকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। দলের পাঁশকুড়া ব্লক সভাপতি সুজিত রায় বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীর পাঁশকুড়া নিয়ে কিছু বলার অধিকার নেই। উনি কেন্দ্রীয় সরকারকে বলুন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের টাকা দিতে। তাহলে তো পাঁশকুড়া ডুবত না।’’ সুজিতের আরও কটাক্ষ, ‘‘গতকাল ওঁর দলের রাজ্য সভাপতি পাঁশকুড়ায় এসে দলীয় কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। আজ উনি এসেছেন সস্তার রাজনীতি করতে।’’