কাটোয়া কলেজের শিক্ষক, শিক্ষিকার উপর হামলা, উঠল মারধরের অভিযোগও! কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা
আনন্দবাজার | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকার উপর হামলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায়। আক্রান্ত দু’জনই কাটোয়া কলেজে শিক্ষকতা করেন। আক্রান্ত শিক্ষক অর্পণ দাস ঘটনার কথা জানিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। অন্য দিকে, আক্রান্ত শিক্ষিকা চন্দ্রাণী দাস এখনও কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জানা গিয়েছে, চন্দ্রাণী কাটোয়া কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষিকা। কাটোয়া শহরেই তাঁর বাড়ি। রোজ নিজের স্কুটিতে করে যাতায়াত করেন। শনিবার কলেজ থেকে ফেরার পথে তাঁর উপর হামলার ঘটনা ঘটে। চন্দ্রাণীর কথায়, ‘‘দুপুর ২টোর পর যখন আমি কলেজ থেকে বার হচ্ছিলাম তখন দেখি আমার স্কুটিটা চালু হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই কলেজের পিছনে ঝুপোকালী তলার কাছে একটি গ্যারেজে মেরামত করাতে নিয়ে যাই। সেই সময় আচমকাই আমাকে প্রায় ৪০-৪৫ জন ঘিরে ধরে মারধর শুরু করেন।’’ অভিযোগ, আহত অবস্থায় চন্দ্রাণীকে রাস্তায় ফেলেই পালায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে যান চন্দ্রাণী। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে।
কেন চন্দ্রাণীর উপর হামলা করল দুষ্কৃতীরা? আক্রান্ত শিক্ষিকার সন্দেহ, ‘‘আমি বছর চারেক আগে আমাদের কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান নির্ভীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছিলাম। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। মাঝেমধ্যেই নির্ভীক আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিতেন। আমার ধারণা উনিই লোকজন দিয়ে আমার উপর হামলা করিয়েছেন।’’
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নির্ভীক। তাঁর কথায়, ‘‘চার বছর আগে চন্দ্রাণী আমার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা অভিযোগ করেছিলেন। সেগুলির মধ্যে দু’-একটি এখনও বিচারাধীন। তখন থেকেই আমার সঙ্গে ওঁর কার্যত কথাবার্তা বন্ধ। তা হলে হুমকি দিলাম কখন? হুমকি দিলে প্রমাণ তো থাকবে।’’ তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘কিছু দিন আগে কলেজের কিছু ছাত্রছাত্রী ওঁর (চন্দ্রাণী) এবং আরও দুই শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। মনে হয় সেই রাগেই উনি আমার উপর আবার মিথ্যা দোষারোপ করছেন।"
শনিবার শুধুমাত্র চন্দ্রাণী নন, কাটোয়া কলেজের বিএড বিভাগের শিক্ষক অর্পণের উপরেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ, অর্পণ ছুটির পর বাড়ি ফেরার সময় কাটোয়া স্টেশন রোডের কাছে টোটো থেকে নামতেই তাঁর উপর ৬-৭ জন দুস্কৃতী হামলা করে। অর্পণের কথায়, ‘‘ওরা কারা? কেন হামলা করল? কিছুই বুঝতে পারছি না। আতঙ্কে রয়েছি।’’ ঘটনার কথা জানিয়ে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।
কাটোয়া কলেজের অধ্যক্ষ নির্মলেন্দু সরকার বলেন, ‘‘আমি ঘটনার কথা শুনেছি। দুটো ঘটনাই নিন্দাজনক। তবে কোনও ঘটনাই কলেজের মধ্যে ঘটেনি। কাটোয়া শহর জুড়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাগানো অনেক সিসি ক্যামেরা রয়েছে। আমি চাই পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নিক।’’ চন্দ্রাণীর উপর বেশ কিছু মহিলা চড়াও হয়ে মারধর করছে এমন প্রমাণ সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পুলিশ সংগ্রহ করেছে বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, ওই ঘটনায় হামলাকারী মহিলারা দাবি করেছেন, ‘‘চন্দ্রাণী তাঁদের উদ্দেশে আপত্তিকর ভাষায় গালিগালাজ করেছিলেন। তাই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।’’ জেলা পুলিশ সুপার আমন দীপ ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছেন, অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।