১১ দিনের ধর্না সবে শেষ হয়েছে শুক্রবার। আর শনিবারের মধ্যে তার ‘চিহ্ন’ মুছে যাচ্ছে সল্টলেকের রাস্তা এবং দেওয়াল থেকে! স্বাস্থ্য ভবনের সামনে যে রাস্তায় আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা ধর্নায় বসেছিলেন, সে সব রাস্তা ‘সাফ’ করা হচ্ছে। শনিবার সকাল থেকে ‘যুদ্ধকালীন তৎপরতা’য় চলছে কাজ। একের পর এক দেওয়াল থেকে মুছে দেওয়া হচ্ছে স্লোগান, প্রতিবাদী ছবি। পড়ছে নতুন রঙের প্রলেপ।
সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের নবদিগন্ত ভবনের সামনের রাস্তাটি খুব বেশি চওড়া নয়। পাশেই রয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। তার সামনে ধর্নায় বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তার পাশের রাস্তা ভরিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রতিবাদী স্লোগানে। বাড়িগুলির দেওয়ালে দেওয়ালেও নানা ছবি আঁকা হয়েছিল। বিচার চেয়ে চারদিকে স্লোগান লিখেছিলেন প্রতিবাদীরা। ফুটপাথ, বাড়ির দরজা-জানলা, এমনকি ম্যানহোলের ঢাকনাও রাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রতিবাদের ছবিতে।
শুক্রবার পর্যন্ত সে সব ছবি, রং, লেখা জ্বলজ্বল করছিল স্বাস্থ্য ভবনের পাশের রাস্তায়। তবে শনিবার ধর্নাস্থলে গিয়ে সে সবের দেখা মিলল না। রাস্তায় ‘যুদ্ধকালীন তৎপরতা’য় কাজ চলছে। ছবি, রং, স্লোগান মুছে হচ্ছে সাফাইয়ের কাজ।
কারা স্লোগান মুছছেন? কাদের নির্দেশে চলছে এই ‘সাফাই অভিযান’? উত্তর নেই। শনিবার দুপুরে সেক্টর ফাইভের সেই রাস্তায় গিয়ে দেখা মিলল জনা ১৫ শ্রমিকের। কেউ রাস্তার উপর কালো রং ঢালছেন। কেউ দেওয়ালে নীল রঙের তুলি বোলাচ্ছেন। এক দিন আগেও এই রাস্তা এবং দেওয়াল যে আন্দোলনের স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছিল, শনিবারের ছবি দেখে তা বোঝার উপায় নেই। চকচকে নীল দেওয়ালে যেন অন্য কোনও রঙের আঁচড় পড়েইনি কখনও।
কেন রং করছেন? প্রশ্ন শুনে রাস্তায় স্লোগানের উপরে কালো রং করতে করতেই মাথা তুললেন এক জন। বললেন, ‘‘আমাদের ঠিকাদার যা করতে বলেছেন, করছি। তিনি এখন এখানে নেই। সকাল থেকে কাজ শুরু করেছি। থিনার দিয়ে রংগুলো তুলছি।’’ কার নির্দেশে এই কাজ হচ্ছে? উত্তর এল, ‘‘তা তো আমরা জানি না!’’ কে, কেন, কবে, কোথায়— আর কোনও প্রশ্নের উত্তরই মিলল না।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর থেকে শুরু হয়েছিল আন্দোলন। জুনিয়র ডাক্তারেরা টানা ৪২ দিন কর্মবিরতি পালন করেছেন। শনিবার থেকে তাঁরা যোগ দিয়েছেন জরুরি পরিষেবায়। আংশিক কর্মবিরতি উঠেছে। এর মাঝে আরজি কর মামলা গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালত জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার নির্দেশ দেওয়ার পরেই তাঁরা স্বাস্থ্য ভবন অভিযান করেছিলেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনের রাস্তায় তাঁরা ধর্নায় বসেছিলেন। রাস্তায় ত্রিপল খাটিয়ে অস্থায়ী ধর্নাস্থল গড়ে তোলা হয়েছিল। জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। দিনরাত সল্টলেকের রাস্তায় পড়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের ‘বিচার চাই’ স্লোগানে টানা ১১ দিন ধরে মুখরিত ছিল সেক্টর ফাইভের রাস্তা। এমনকি, স্বাস্থ্য ভবনের সামনের ওই ধর্নাস্থলে একদিন পৌঁছে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে ধর্না তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান জুনিয়র ডাক্তারেরা। শুক্রবার স্বাস্থ্য ভবন থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত মিছিল করে তাঁরা অবস্থান তোলেন। শনিবার থেকে যোগ দিয়েছেন জরুরি পরিষেবায়। ধর্না ওঠার এক দিনের মধ্যেই রাতারাতি আন্দোলনের রাস্তাকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, সামনে পুজো। পুজোর আগে সাধারণ ভাবে কলকাতার বিভিন্ন রাস্তাঘাট সারানোর কাজ হয় এবং দেওয়াল রং করা হয়ে থাকে। কিন্তু সল্টলেকের ওই রাস্তার কাজ তেমনই ‘স্বাভাবিক’, মানতে চাইছেন না অনেকেই।