এই সময়: গত কয়েকদিনের বন্যা পরিস্থিতির শনিবার কিছুটা হলেও উন্নতি হলো। তবে ফের নিম্নচাপের খবরে আতঙ্কিত প্লাবিত এলাকার মানুষ। গ্রামীণ হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের দু-একটি পকেট ছাড়া প্রায় সব এলাকা থেকেই বন্যার জল নেমে যায় এ দিন। তবে জল নামতেই বন্যার ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি সামনে আসতে শুরু করেছে।রাজ্য সড়কের কমপক্ষে তিনটি জায়গায় বিশাল এলাকা ভেঙে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে রাস্তা। মাইলের পর মাইল পাকা রাস্তার উপরে পিচের চাদর উঠে গিয়েছে। হাজার হাজার বিঘে ধান ও সব্জির খেত এখনও জলের নীচে। জল নামতেই হুড়মুড়িয়ে পড়ছে মাটির বাড়ি। অনেক জায়গায় পাকা বাড়িও ভিত আলগা হয়ে পড়ে গিয়েছে।
গত কয়েকদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মুণ্ডেশ্বরী ও দামোদরের জল একটু হলেও কমেছে। কিন্তু জল যন্ত্রণা কমেনি খানাকুলের। মাড়োখানা, হানুয়া, ঢলডাঙা, রাজহাটি, বন্দর, নন্দনপুর, জগৎপুর, কাকনান, কুশালির মতো বহু এলাকা এখনও জলের তলায়। কোথাও ১৭ ফুট, আবার কোথাও ১৫ ফুট আবার কোথাও ১২ ফুটের মত জল জমে আছে।
এলাকায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ত্রাণ ও পানীয় জলের জন্য হাহাকার। এর জেরে ব্যাপক বিক্ষোভ চলে খানাকুলের গোপালনগরে। বানভাসি মানুষ আরামবাগ-খানাকুল প্রধান সড়কে শুয়ে পড়ে পথ অবরোধ করেন। এ দিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আরামবাগ মহকুমার বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। পুরশুড়া ব্লকের বিডিও অফিস সংলগ্ন স্থানে শুভেন্দু ত্রাণ বিলি করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ম্যান মেড’ বন্যার অভিযোগ উড়িয়ে দেন তিনি।
বন্যার জমা জলে ডুবে কেশপুরের ধলহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের হেড়া গ্রামে মৃত্যু হলো এক শিশুর। মৃত শিশুর নাম রাজেশ দোলুই (৭)। বন্যায় কেশপুরেই জলে ডুবে মৃত্যু হলো দুই শিশুর। অন্যদিকে, ঘাটাল, দাসপুর, ডেবরা, কেশপুরের প্লাবিত এলাকা থেকে জল নামছে খুব ধীর গতিতে। এখনও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন বেশ কিছু এলাকা।ডেবরার গোলগ্রাম-মলিঘাটি, গোলগ্রাম থেকে ত্রিলোচনপুর যাওয়ার রাস্তার উপর দিয়ে জল বয়ে যাওয়ায় ভেঙেচুরে গেছে রাস্তার একাধিক জায়গা। ঘাটালের প্রত্যন্ত এলাকায় বোট নিয়ে ত্রাণ পৌঁছচ্ছেন জেলাশাসক থেকে পুলিশ সুপার।
ঝাড়খণ্ডের গালুডি জলাধার থেকে সুবর্ণরেখা নদীতে জল ছাড়ার জেরে ঝাড়গ্রাম জেলায় সাঁকরাইল, নয়াগ্রাম ও গোপীবল্লভপুর ব্লকে প্রায় কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। কারণ, জল পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর জমিতে পলি পড়ে সব্জি চাষের ক্ষতি বাড়তে পারে। সাঁকরাইল ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রামে ডুলুং নদীর জল বাড়ায় খালের কালভার্ট ভেঙে গ্রামে জল ঢুকে গিয়েছে।
নতুন করে জল না ছাড়ায় পাঁশকুড়ায় জল নামতে শুরু করেছে। প্রশাসনের আশা ২-৩ দিনের মধ্যে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। তবে পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগর, ঘোষপুর, চৈতন্যপুর-১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশাপাশি কোলাঘাট ব্লকের দেড়িয়াচক-সহ আশপাশের এলাকা এখনও জলের তলায়।