আরজি কর-কাণ্ডের পর থেকেই হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবি আরও জোরালো হয়েছে। বার বার উঠে এসেছে নিরাপদ কর্মস্থলের দাবি। এরই মধ্যে ফের হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্সের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও হুমকির অভিযোগ রোগীর পরিজনের বিরুদ্ধে। আরজি করের প্রসঙ্গ টেনেও তিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ। নার্সদের দাবি, অভব্য আচরণের মাঝে এক পর্যায়ে রোগীর ওই আত্মীয় বলে ওঠেন, “যখন আরজি কর বানিয়ে রেখে দেব, তখন তোরা বুঝতে পারবি!” শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের চাঁচলে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আসগর আলি নামে এক রোগী। তাঁর বাড়ি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকায়। রোগীর সঙ্গে ছিলেন তাঁর আত্মীয় আরিফ আলি। পুরুষ ওয়ার্ডের ভিতরে একটি চেয়ার নেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রথমে কর্তব্যরত পুরুষ নার্সের সঙ্গে বচসা শুরু হয় রোগীর ওই আত্মীয়ের। পরিস্থিতি সামাল দিতে আসেন এক মহিলা নার্স ও হাসপাতালের সিস্টার ইনচার্জ। তাঁদের সঙ্গেও বচসায় জড়ান অভিযুক্ত। এমনকি এক মহিলা নার্সের উদ্দেশে তিনি জাতপাতের খোঁচা দিয়ে বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য করেন বলেও অভিযোগ। পাশাপাশি প্রভাব খাটিয়ে ‘চাকরি খেয়ে নেওয়ার’ হুমকিও দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে আসছে।
হাসপাতালের সুপার মহম্মদ শামিমকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “ওই ব্যক্তি গালাগাল দিতে শুরু করেছিলেন বলে অভিযোগ। চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে তাঁরা কোনও অভিযোগ তোলেননি। পুরোটাই দুর্ব্যবহার থেকে শুরু হয়েছিল। এক জন সিস্টারকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে এবং আরজি করের মতো কাণ্ড করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সঙ্গে সঙ্গে থানায় খবর দেওয়া হয়। তাঁরা প্রাথমিক অনুসন্ধান করে গিয়েছেন।” আরজি করের পরিস্থিতি নিয়ে হুমকি পাওয়ায় হাসপাতালের কর্তব্যরত কর্মীরা যথেষ্ট ভীত বলেও জানিয়েছেন সুপার। তবে স্থানীয় থানার আইসি সকলকে আশ্বস্ত করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ উঠছে ওই ব্যক্তি বচসার সময় বলেছিলেন, “আমার অনেক ক্ষমতা আছে। দু’মিনিটে চাকরি খেয়ে নিতে পারি।” তবে কিসের প্রভাবে তাঁর এই ‘ক্ষমতা’, কোনও প্রভাবশালীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। হাসপাতালের একটি সূত্রের দাবি, বচসার সময় ওই ব্যক্তি রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসনকে ফোন করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে হাসপাতালের সুপার বা সিস্টার ইনচার্জ, এমন কোনও তথ্যে মান্যতা দেননি। সুপারের কথায়, “মন্ত্রী সম্পর্কিত কিছু হয়নি।” বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী তাজমুল হোসেনের সঙ্গেও। তাঁর বক্তব্য, “দল এমন ঘটনাকে সমর্থন করে না। আমিও করি না। প্রশাসন বিষয়টি দেখছে।”
ঘটনার প্রেক্ষিতে চাঁচলের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সোমনাথ সাহা জানিয়েছেন, হাসপাতাল সুপারের অভিযোগ পেয়েই ঘটনাস্থলে চাঁচল থানার আইসিকে পাঠানো হয়েছিল। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে এবং আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই।