এই সময়: আরজি করের ঘটনায় নাগরিক সমাজের টানা আন্দোলনে এ বছর পুজোর আবহ তৈরি হতেই অনেকটা দেরি হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন আংশিক প্রত্যাহারের পর যেন ধীরে ধীরে পুজোর আমেজটা তৈরি হচ্ছে। কেনাকাটা করতেও বেরোচ্ছেন অনেকে। পাশাপাশি ফিনিশিং টাচের পর্ব শুরু হয়েছে বড়-ছোট পুজোগুলিতে।কিন্তু ফের চোখ রাঙাতে শুরু করেছে দুর্যোগ, যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে উদ্যোক্তাদের। পশ্চিম-মধ্য এবং দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে জোড়া ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। শুক্র-শনি বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির পর আজ রবিবার থেকে আবার ঘন মেঘের আস্তরণে ঢাকতে পারে আকাশ। এই জোড়া ঘূর্ণাবর্ত গভীর নিম্নচাপে পরিণত হলে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। পূর্বাভাস ঠিক হলে মহালয়ার আগে ধাক্কা খেতে পারে পুজোর বাজার। ঝড়-বৃষ্টিতে মণ্ডপ ও প্রতিমার ফিনিশিং টাচের কাজও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা।
দক্ষিণ কলকাতার হাই-প্রোফাইল পুজো ‘ত্রিধারা সম্মিলনী’র কর্ণধার দেবাশিস কুমারের কথায়, ‘ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। এখন বৃষ্টি শুরু হলে সমস্যা বাড়বে। যে ইনস্টলেশনগুলি খোলা আকাশের নীচে থাকার কথা, বৃষ্টি শুরু হলে সে সব সরিয়ে রাখতে হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনে থিম-ভাবনাও বদলাতে হতে পারে। কিন্তু তাতে বাজেট বেড়ে যায়।’
উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেন দুর্গাপুজো সমিতির সম্পাদক সৌমেন দত্তের কথায়, ‘থিমের যে সব কাজ শুকনো ওয়েদারে করতে হয়, নিম্নচাপের কথা মাথায় রেখেই তা আমরা দ্রুত সেরে ফেলছি।’ বৃষ্টি হলে বিভিন্ন ইনস্টলেশন ক্লাবের ভিতর বা সদস্যদের বাড়িতে রাখার পরিকল্পনা তাঁদের। তবে বৃষ্টি চললে ফিনিশিংয়ের কাজ যে প্রভাবিত হবেই, সে কথা জানাচ্ছেন তিনিও। শুধু ত্রিধারা বা কাশী বোস লেন তো নয়, প্রায় সব কমিটিরই এক চিন্তা।
শুক্রবার মধ্যরাতে কলকাতার একাধিক এলাকায় অল্প সময়ের জন্য হলেও ঝড় হয়েছে। তাতে নামী পুজোগুলির মণ্ডপ সে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কিন্তু সম্ভাব্য নিম্নচাপে তো ক্ষয়ক্ষতি হতেই পারে! বিশেষত থিম-পুজোর অনেক ইনস্টলেশনই খোলা আকাশের নীচে থাকে। থিম অনুযায়ী আলোকসজ্জা, মিউজ়িক অ্যারেঞ্জমেন্ট হয়। বৃষ্টিতে সবই প্রভাবিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা।
অতীত-অভিজ্ঞতায় কিছু কিছু পুজো অবশ্য ইনস্টলেশনের উপরে অস্থায়ী শেড তৈরি করছে। টালা বারোয়ারির সম্পাদক অভিষেক ভট্টাচার্য যেমন বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই পুজোর মাঠে কাদা হবে। তাই মণ্ডপের ভিত বেশিই উঁচু করা হয়েছে। থিমের ইনস্টলেশনগুলির উপরে অস্থায়ী শেড হয়েছে। কিন্তু টানা বৃষ্টি হলে অনেক কিছুই বদলাতে হয়। তখন খরচ যেমন বাড়ে, তেমনই কারিগর পেতে সমস্যা হয়।’ জানাচ্ছেন, ইলেকট্রিক সামগ্রী নিয়েও অসুবিধে হয়। সবকিছুর জন্যই অবলম্বন করতে হয় বাড়তি সতর্কতা।
দক্ষিণ কলকাতার বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘের কর্তা সন্দীপ চক্রবর্তীর কথায়, ‘বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে মণ্ডপের সমস্ত বৈদ্যুতিন লাইন নতুন ওয়্যার দিয়ে করা হয়। কাটা তার ব্যবহার করা হয় না।’
কিন্তু কত সতর্কতাই বা নেওয়া যায়! কলকাতায় এমনও বেশ কিছু এলাকায় পুজো হয়, যেখানে জল জমার সমস্যা রয়েছে। তেমনটা হলে তো থিম, মূল মণ্ডপ, লাইটের কাজ শেষ করাই কঠিন হবে। আপাতত তাই ওয়েদার-আপডেটে নজর রাখছেন ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সম্পাদক শাশ্বত বসু-সহ অন্য কর্তারা।