এই সময়, শিলিগুড়ি: টাকার ‘লোভ’ আর বিদেশে চাকরি! এই দুই-এর ফাঁদে পড়ে রাশিয়ায় গিয়ে বিপদেরর মুখে পড়েছিলেন তিনি। শনিবার কালিম্পংয়ে নিজের বাড়িতে পৌঁছে এমনটাই জানালেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া উরগেন তামাং। এ দিন দুপুর বারোটা নাগাদ দিল্লি-বাগডোগরা উড়ানে তিনি বাগডোগরায় পৌঁছন। সেখান থেকে সড়কপথে কালিম্পংয়ে নিজের বাড়িতে যান। তাঁর ফেরা উপলক্ষে ব্যানার টাঙানো হয় কালিম্পং কলেজ লাগোয়া ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে।বিকেলে উরগেনের সঙ্গে রবি প্রধানকে জিপে চাপিয়ে শহর ঘোরানো হয়। সন্ধ্যায় কালিম্পং পুরসভার ভবনে খাদা পরিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয় তাঁকে। গত জানুয়ারি মাসে চাকরির চেষ্টায় বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি। প্রথমে গুজরাট, সেখান থেকে মার্চ মাসে দিল্লি তারপর এজেন্টের মাধ্যমে রাশিয়ায় পৌঁছন। নিরাপত্তারক্ষীর চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই এজেন্ট তাঁকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠিয়ে দেয় বলে অভিযোগ।
প্রাণ বিপন্ন বুঝে প্রথমে মার্চের শেষে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো-বার্তা দিয়ে সাহায্য চান। এপ্রিলেও ফের সহায়তা চাইলে এগিয়ে আসেন কালিম্পংয়ের পুর প্রধান রবি প্রধান। গত কয়েক মাসের এই দুর্ভোগের জন্য নিজেকেই এ দিন কার্যত দায়ী করেছেন প্রাক্তন ওই ভারতীয় সেনা। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম অনেক টাকার মালিক হব। বিদেশে চাকরি করব। ওই স্বপ্নপূরণেই মোটা বেতনের নিরাপত্তা রক্ষীর চাকরি প্রস্তাব পেয়ে রাশিয়া চলে যাই। সেখানে গিয়ে এমন ভাবে বিপদে পড়ব বুঝতে পারিনি।’
দীর্ঘদিন পরে নিজের দুই সন্তানকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি উরগেন। ভিজে যায় চোখ। স্ত্রী অম্বিকা তামাংয়েরও একই দশা। যুদ্ধের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়েও উরগেনের একই জবাব, ‘আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। রাশিয়ায় সবচেয়ে সমস্যা হয়েছিল ভাষা। কিছুই বুঝতাম না। যুদ্ধ করতে নতুন শহরে পাঠানো হলেও সেখানকার নাম-ধাম কিছু জানতাম না। দোভাষির মাধ্যমে কথা হতো।’
কালিম্পংয়ের পুর প্রধান বলেন, ‘বেশির ভাগ ভারতীয় সেনাই রাশিয়ায় মানসিক অবসাদে ভুগছে। প্রতারণার চেয়েও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ভাষা। নিজের সমস্যার কথা কাউকে বলতে পারছে না। তবে পাহাড়ে উৎসব শুরুর আগেই উরগেনকে ফেরানো সম্ভব হয়েছে, সেটা ভালো কথা।’
দুর্গাপুজোর সময়ে পাহাড়ের নেপালি সম্প্রদায়ের মানুষদের বড় উৎসব হল ‘দশাই’। এই সময়ে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনেরা আসেন। গোটা পাহাড় উৎসবে মেতে ওঠে।