সৈকত মাইতি, তমলুক: চারিদিক জলমগ্ন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্রমশই বাড়ছে জ্বর-সর্দি থেকে শুরু করে নানা রকম রোগ! ত্রাণ নিয়েও রয়েছে নানান অভিযোগ। এমন অবস্থায় পাঁশকুড়ার বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে বানভাসিদের পাশে থাকার বার্তা নিয়ে ছুটে এলেন কলকাতার জুনিয়র ডাক্তাররা। রবিবার সকাল পাঁশকুড়া নাগরিক সমাজের ব্যবস্থাপনায় ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট-এর পরিচালনায় আর জি কর হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা পাঁশকুড়ার বন্যাপীড়িত তিনটি এলাকায় ‘অভয়া’ ক্লিনিকে রোগী দেখার কাজ শুরু করেন।
কনকপুর মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়, গড়পুরুষোত্তমপুর ইউথ কর্নার ক্লাব এবং দক্ষিণ চাঁচিয়াড়াতে খোলা হয়েছিল ‘অভয়া’ ক্লিনিক। তাও একেবারে বিনামূল্যে। উপস্থিত ছিলেন আর জি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ কিঞ্জল নন্দ ও অনিকেত মাহাতো-সহ অন্যান্য জুনিয়র ডাক্তাররা। আর এই তিনটি এলাকার প্রায় ৮০০ রোগীকে বিনামূল্যে ওষুধ-সহ চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হয়। চাঁচিয়াড়াতে প্রায় ২০০ মানুষের হাতে ত্রাণ সামগ্রীও তুলে দেন তাঁরা। এমন আন্তরিকতায় খুশিতে আমজনতা।
উল্লেখ্য, আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকের কেলোমাল হাই স্কুলেও ক্লিনিক খুলে বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে দেখা গিয়েছিল কলকাতার একদল চিকিৎসককে। এর পর আচমকা কাঁসাইয়ের নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। পাঁশকুড়া পুরসভা থেকে শুরু করে প্রায় দশটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কয়েক হাজার মানুষ জলের নিচে। বিদ্যুৎহীন অবস্থায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত এলাকায় আটকে পড়েছেন বহু মানুষ। প্রাণ বাঁচাতে সাপে-মানুষে একইসঙ্গে আশ্রয় নিচ্ছে ওই সমস্ত জলবন্দি এলাকায়। সময় মতো পানীয় জল কিংবা ত্রাণ পৌঁছতেও যথেষ্টই বেগ পেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। অস্বাস্থ্যকর, প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে গিয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ছে যথেষ্টই। এমন অবস্থায় বন্যা কবলিত এলাকায় আটকে পড়া বানভাসিদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে ছুটে এলেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
তাঁদের দাবি, আগামী দিনেও এই অভয়া ক্লিনিক খুলে এভাবেই পরিষেবা দিতে চান। যা রীতিমতো নজিরবিহীন বলে দাবি স্থানীয়দের। চিকিৎসা পরিষেবা নিতে ছুটে আসা কনকপুর এলাকার বাসিন্দা মোরশেদ মল্লিক বলেন, “দীর্ঘ সময় ধরে বন্যার জলে যাতায়াত করতে গিয়ে শারীরিকভাবে ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম। সঙ্গে জ্বর, যন্ত্রণা ও শরীরের নানা জায়গায় চুলকানি দেখা দিয়েছিল। তাই এমন দুর্বিষহ এলাকায় যে ডাক্তারবাবুরা বাড়ির পাশে এসে এভাবে আমাদের পাশে দাঁড়াবেন তা আমরা কখনওই ভাবিনি।” ওই এলাকার আর এক বাসিন্দা মামনি জানা বলেন, “বন্যায় হাবুডুবু অবস্থায় চিকিৎসা করাতে দূরে কোথাও যেতে পারছি না। এই পরিস্থিতিতে যেভাবে জুনিয়র ডাক্তারবাবুরা চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে চলেছেন তা নজিরবিহীন। তাই হাজারও যন্ত্রণা দুর্ভোগের মধ্যেও আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছি। আমরাও চাই, আর জি কর কান্ডের সুবিচার হোক।”
এদিকে অভয়া ক্লিনিকের পক্ষ থেকে ডা. শুভজিৎ বিশ্বাস বলেন,”আর জি কর কাণ্ডের আন্দোলন চলছেই। বিভিন্ন স্তরে বিভিন্নরকম ভাবেই আমরা আন্দোলন করেছি। তারই অংশ হিসেবে আমরা বন্যা কবলিত মানুষদের সেবায় পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরাও বুঝতে পেরেছি মানুষ আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। তাই আমরাও আমাদের কর্তব্যে অবিচল থেকে এই সকল অসহায় মানুষদের পাশে এসে পরিষেবা দিতে চাই। বন্যা কবলিত এলাকা গুলিতে যাতে মশার কামড়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার হাত থেকে মানুষ রক্ষা পেতে পারেন তার জন্যও সতর্ক করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ডাক্তারবাবুরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকি। আর এই অসহায় অবস্থায় মানুষ যখন কষ্ট পাচ্ছেন, তখন আমরা কোনওভাবেই নিজেদের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকতে পারি না। আমরা অভয়ার সুবিচারের দাবিতে এর আগেও আন্দোলন করে এসেছি আগামী দিনেও এভাবেই মানুষের পাশে থেকে লড়াইটা চালিয়ে যেতে চাই।”