এই সময়, কৃষ্ণনগর: ট্রেনে অসুস্থ হয়ে পড়ায় স্টেশনে নামিয়ে দিয়েছিলেন সহযাত্রীরা। অভিযোগ, বিনা চিকিৎসায় সেখানেই দু’ঘণ্টা পড়ে থেকে মৃত্যু হলো এক অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের। ঘটনায় ক্ষোভের মুখে পড়েন স্টেশনের দায়িত্বে থাকা বুকিং ক্লার্ক ও জিআরপি কর্মীরা। রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার রানাঘাট-কৃষ্ণনগর ট্রেন লাইনের তাহেরপুর স্টেশনে। মৃতের নাম প্রদীপ বিশ্বাস (৬২)। কৃষ্ণনগর লাগোয়া গোবরাপোতা নেতাজি হাই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি।বাড়ি কৃষ্ণনগরে। অসুস্থ হয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে পড়ে থাকলেও কেন তাঁকে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলো না, সে প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ দেখান মৃতের আত্মীয়-পরিজন। কৃষ্ণনগর জিআরপি-র আধিকারিকের দাবি, কৃষ্ণনগর স্টেশন থেকে তাঁরা যখন তাহেরপুরে পৌঁছন, ততক্ষণে মৃতের পরিবারের লোকেরা চলে এসেছিলেন। আর তাহেরপুর রেলস্টেশনের বুকিং ক্লার্ক এ নিয়ে কোনও কথাই বলতে চাননি।
মৃত প্রধান শিক্ষকের এক আত্মীয় বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘কৃষ্ণনগর থেকে সকাল ৯টায় শিয়ালদহগামী ট্রেনে চেপেছিলেন প্রদীপ বিশ্বাস। একটা স্টেশন পার করার পরেই বাড়িতে ফোন করে বলেছিলেন, শরীর খারাপ করছে। এর প্রায় আধ ঘণ্টা পরে তাঁর মোবাইল থেকেই ফোন করে এক রেলকর্মী আমাদের জানান, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাহেরপুর স্টেশনে রয়েছেন। কৃষ্ণনগরের বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে তাহেরপুর স্টেশনে পৌঁছতে আমাদের ১১টা বেজে যায়। গিয়ে দেখি, দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে রোদের মধ্যে একটা পিলারে হেলান দিয়ে বসিয়ে রাখা আছে তাঁকে। ঘাড় কাত করা। সঙ্গে সঙ্গে বীরনগর হাসপাতালে নিয়ে গেলে জানতে পারি, আগেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর।’
পরিবারের লোকেরা পরে জানতে পারেন যে, প্রদীপ বিশ্বাসের মোবাইল থেকে তাঁর বাড়িতে ফোন করেছিলেন তাহেরপুর রেলস্টেশনের বুকিং ক্লার্ক সুজিত সরকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রী জানিয়েছেন, ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়ার পরে অসুস্থ মানুষটিকে পিলের হেলান দিয়ে বসান ওই বুকিং ক্লার্কই। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ মৃতের আত্মীয়েরা স্টেশনে বিক্ষোভ দেখান। সেই সময়ে অফিসের ভিতরে ঢুকে গেটে তালা লাগিয়ে দেন সুজিত। তাতেই ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।
পরিবারের লোকেরা বলেন, ‘ওঁর ফোন তো লক করা ছিল। লক খুলে যখন ফোন করা গিয়েছে, তার মানে তিনি তখন বেঁচেছিলেন। তা হলে কেন সেই সময় তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন না রেলকর্মীরা? কেনই বা সেখানে জিআরপি-র কেউ ছিলেন না?’
কৃষ্ণনগর জিআরপির ওসি ধর্মেন্দ্র সিং বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা কৃষ্ণনগর স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে যখন তাহেরপুরে যাই, ততক্ষণে বাড়ির লোক পৌঁছে গিয়েছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে যেতে আমরাও সাহায্য করি পরিবারের লোককে। আমাদের কোনও গাফিলতি ছিল না।’
শিয়ালদহ ডিভিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই ব্যক্তি সকাল ৯টা নাগাদ অসুস্থ বোধ করেন। তাঁকে স্টেশনের বেঞ্চে বসানো হয়। ৯:৩০ নাগাদ তিনি শুয়ে পড়েন। তখন তাঁকে বীরনগরের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায় জিআরপি। দুপুর ১:৩০ নাগাদ খবর আসে তিনি মারা গিয়েছেন। কাজেই স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং রেলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা বলে মনে করছে ডিভিশন।
প্রদীপ যে স্কুলে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব সামলেছেন, সেই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অয়ন দাস বলেন, ‘খুবই দায়িত্বশীল এবং হাসিখুশি ছিলেন স্যর। ২০২২ সালের জুন মাসে অবসর নিয়েছিলেন তিনি। আমরা অবাক হয়ে যাচ্ছি, দীর্ঘক্ষণ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পড়ে থাকলেও রেলকর্মী বা জিআরপি-র কেউ তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন না? এতটাই অমানবিক তাঁরা?’