এই সময়, কৃষ্ণনগর: আরজি কর ইস্যুতে প্রতিবাদ-আন্দোলনের মধ্যে কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজে দেড় বছর আগে এক ডাক্তারি-পড়ুয়া তরুণীর উপরে নির্যাতনের ঘটনা সামনে এসেছে। ‘থ্রেট কালচার ও সিন্ডিকেট’ চালানোর অভিযোগে ৪০ জন ডাক্তারি পড়ুয়াকে কয়েকদিন আগে বহিষ্কৃত করার পরে সাহস বেড়েছে অনেকের। কলেজের তথাকথিত দাদাদের ভয়ে এতদিন যাঁরা মুখ বুজে সহ্য করেছিলেন, সহপাঠীদের অনেকেই এখন সেই নির্যাতিতার পাশে দাঁড়িয়েছেন।
জানা গিয়েছে, গত বছর এপ্রিল মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন হওয়া নিয়ে ছাত্রদের দুই গোষ্ঠী আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যায়। ছাত্র সংগঠনের সেই সময়ের দাপুটে নেতারা হুইপ দিয়ে বলেছিলেন, কনভোকেশনের অনুষ্ঠানে কেউ অংশগ্রহণ করবে না।ওই নির্যাতিতা বলেন, ‘কনভোকেশনে অংশগ্রহণের জন্য রাতে হস্টেলের ঘরে এক সিনিয়র বন্ধুকে নিয়ে গানের মহড়া দিচ্ছিলাম। ওদের নিষেধ না শুনে কেন আমরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করব, এই আক্রোশে আমাদের উপরে চড়াও হয় ইউনিয়নের দাদারা। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে আমাকে ঠেলে ফেলে দিয়ে বিছানা উল্টে দেয়। একজন আবার আমার নাকে ঘুসি মারে। আমার এক বন্ধু ঠেকাতে গেলে তাঁকেও শারীরিক হেনস্থা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘সেই সময়ে কলেজের এমএসভিপিকে ঘটনাJ কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু অভিযুক্ত ছাত্রনেতারা তাঁকে সহজেই ম্যানেজ করে নেয়। বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ করি।’
ঘটনার সময়ে নির্যাতিতার সঙ্গে হস্টেলের ওই ঘরে হাজির থাকা আরেক ডাক্তারি পড়ুয়া বলেন, ‘প্রতিবাদ করলে পেছন থেকে গলা চেপে ধরে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়। ওদের হুইপের বিপক্ষে গিয়েছি বলে ক্ষমতা দেখিয়ে আমার ইন্টার্নশিপ পেতে তিন মাস দেরি করিয়ে দিয়েছিল।’
জানা গিয়েছে, মেডিক্যাল কলেজ কাউন্সিল যে ৪০ জন পড়ুয়াকে শাস্তি দিয়েছে সেই তালিকার প্রথম দিকে থাকা কয়েকজন ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত। কল্যাণী কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড জেএনএম হাসপাতালের এথিক্স কমিটির সদস্য অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, ‘ছাত্র নেতা আলিম, হাসানুজ্জামান, বালা এবং অখিল-সহ আরও কয়েকজন ছিল বলে নিগৃহীতার কাছ থেকে জেনেছি। কলেজের সেই সময়ের অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ওই অভিযুক্ত ছাত্র নেতাদের আড়াল করেছিলেন। এমনকী মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নির্যাতিতার অভিভাবককে ফোন করে চাপও দিয়েছিলেন। কেসটি এখন হাইকোর্টে রয়েছে।’
অভিযুক্ত আলিম বিশ্বাসের বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। অভিযুক্ত ছাত্র নেতা অখিলের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি। কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘ওই ছাত্রীর বাবাকে ফোন করে কেস তুলে নেওয়ার জন্য যে অডিয়ো ক্লিপের প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে, সেটাতে কোথাও কিন্তু চাপ দিয়ে মামলা তোলার কথা বলা হয়নি।’