এই সময়, নয়াদিল্লি: গোরু পাচারে ইডির দায়ের করা মামলায় শুক্রবার অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টর জামিন মঞ্জুর করতে গিয়ে দিল্লির রাউজ় অ্যাভিনিউ কোর্টের বিচারক জ্যোতি ক্লেয়ার জানিয়েছিলেন, অভিযুক্তের সঙ্গে গোরু পাচারের সিন্ডিকেটের টাকার লেনদেন সংক্রান্ত জোরালো তথ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করতে পারেনি তদন্তকারী এজেন্সি। পাশাপাশি কেষ্টর শারীরিক অবস্থা নিয়েও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন বিচারক।আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, অনুব্রত মণ্ডল রেডিক্যুলোপ্যাথি বা মেরুদণ্ড ও স্নায়ুর সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর শরীরের নীচের অংশে তীব্র ব্যথা হতো। ক্লস্ট্রোফোবিয়ার সমস্যাও ছিল তাঁর। অর্থাৎ কোনও ‘ক্লোজ়ড’ বা বদ্ধ এলাকায় তাঁর গুরুতর সমস্যা হতো। সেই কারণে তাঁর ‘ক্লোজ়ড এমআরআই’ করা সম্ভব হয়নি বলে তিহাড় সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন আদালতে।
আইনজীবীদের একাংশ রায়ের এই অংশের সূত্রে প্রশ্ন তুলছেন, ‘ক্লোজ়ড এমআরআই না-হলে কেন ওপেন-গ্যান্ট্রি এমআরআই করানো হলো না। দিল্লিতে তো অনেক হাসপাতালেই এই পরিষেবা রয়েছে। আগামী দিনে অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবীদের এই বিষয়টি নিয়ে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ আছে।’
গত শুক্রবার রাউজ় অ্যাভিনিউ কোর্ট কেষ্টর জামিন মঞ্জুর করলেও রবিবার পর্যন্ত তিনি তিহাড় জেল থেকে মুক্তি পাননি। আজ, সোমবার বা আগামিকাল, মঙ্গলবারের মধ্যে তিনি ছাড়া পেয়ে যাবেন বলে মনে করছেন তাঁর আইনজীবীরা। অনুব্রতর কন্যা সুকন্যা মণ্ডল তাঁর আগেই জামিন পেলেও এখনও বীরভূমের বোলপুরে নিচুপট্টির বাড়িতে ফেরেননি। কেষ্ট জামিন পাওয়ার পরে বাবা-মেয়ে একই সঙ্গে ফিরতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন।
ঘটনাচক্রে মঙ্গলবার সকালেই বীরভূম সফরে যাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শান্তিনিকেতনের বল্লভপুর জঙ্গলে রাঙাবিতান গেস্ট হাউসে ওঠার কথা তাঁর। তার আগেই কেষ্ট বীরভূমে ফেরেন কি না, সে দিকে নজর রয়েছে সবার। মঙ্গলবার প্রশাসনিক বৈঠক সেরে মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়ার কথা তারাপীঠে। ২৫ সেপ্টেম্বর কলকাতায় ফেরার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর সফর ঘিরেও প্রশাসনিক ও জেলা তৃণমূল স্তরে জোর প্রস্তুতি চলছে।
তার আগে কেষ্টর জামিন-রায় নিয়ে আইনজ্ঞদের অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, তিহাড় সংশোধনাগারে অনেক হেভিওয়েট আসামী রয়েছেন। তাঁদের শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা যদি না-মেলে, তা হলে আগামী দিনে অনেক অভিযুক্তই তিহাড় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে প্রশ্ন তুলতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তের জামিনের ক্ষেত্রেও একটা বড় যুক্তি তাঁদের আইনজীবীরা পেয়ে যাবেন।
এক প্রবীণ চিকিৎসকের বক্তব্য, ক্লস্ট্রোফোবিয়ার সমস্যা থাকা রোগীদের ওপেন-গ্যান্ট্রি এমআরআই করানো হয়। অনেক হাসপাতালেই সেই ব্যবস্থা আছে। সেটা অনুব্রতর ক্ষেত্রে করাই যেত। তা না-হলে তো তাঁর আইনজীবীরা বলতেই পারেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁর চিকিৎসায় অবহেলা করা হয়েছে। সেই সুযোগ তিহাড় কর্তৃপক্ষ দিলেন কেন, প্রশ্ন সেখানেও। যদিও আদালতে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছে, অনুব্রতর চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি করা হয়নি।