• শুভঙ্কর-জমানায় কংগ্রেস কি বামেদের হাত ছাড়বে
    এই সময় | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • অধীর চৌধুরীর হাত থেকে বিধানভবনের ব্যাটন গিয়েছে শুভঙ্কর সরকারের হাতে। এতে পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোটে ইতি পড়ার ইঙ্গিত দেখছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

    মাসখানেক আগেই শুভঙ্করকে মেঘালয়, মিজ়োরাম-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের তিন রাজ্যের এআইসিসি-ইন চার্জ করেছিল কংগ্রেস হাইকমান্ড।একজন নেতাকে কোনও রাজ্যের ইন চার্জ করার মাসখানেকের মধ্যে সেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিজেরই রাজ্যে তাঁকে সভাপতি করার নজির কংগ্রেসে বিরল। আচমকা এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তেই অন্য সমীকরণের ইঙ্গিত দেখছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

    আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের পর্যবেক্ষণ — ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই শুভঙ্করকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করেছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। অধীর যে ঢঙে তীব্র তৃণমূল-বিরোধিতা করতেন, শুভঙ্কর সে পথ যে ধরবেন না, তার আভাস রবিবার তাঁর সাংবাদিক বৈঠকেই মিলেছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে এ দিন বিধানভবনেই প্রথম প্রেস কনফারেন্স করেন তিনি।

    শুভঙ্কর এ দিন বলেন, ‘রাহুল গান্ধী আমাকে বলেছেন কংগ্রেসকে শক্তিশালী করতে। সে কাজই অগ্রাধিকার পাবে। যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমে দলের কর্মপন্থা ঠিক করা হবে। পার্টির লাইন, পলিসি ঠিক করবেন নেতৃত্ব।’ একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।

    সেটা হলো, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই তাঁকে সভাপতি করা হয়েছে। ওই ভোটই তাঁর ‘ভিশন’ বলে উল্লেখ করে শুভঙ্করের বক্তব্য, ‘নির্বাচনে প্ল্যান ওয়ান, প্ল্যান টু, প্ল্যান থ্রি - রণকৌশল নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হবে। আমার লক্ষ্য, বিধানসভায় দলের আওয়াজ পৌঁছে দেওয়া।’ ২০২১-এর বিধানসভায় রাজ্যে জোট করেও একটি আসনও জেতেনি বাম-কংগ্রেস।

    বস্তুত, অধীরকে সরানো হলে কে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হবেন, সে দিকে নজর রাখছিল বামেরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার কথায়, ‘তৃণমূল-বিরোধী কাউকে যে সভাপতি করা হচ্ছে না, সম্প্রতি সে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ এক প্রভাবশালী দক্ষিণী নেতার সঙ্গে রাজ্যের শাসকদলের প্রথম সারির এক সাংসদের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই মেকানিজ়ম যে সভাপতি নির্বাচনে অনুঘটকের কাজ করতে পারে, সে ইঙ্গিত ছিল। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সমঝোতার রাস্তা খোলা রাখতে যদি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, অবাক হওয়ার কিছু নেই।’ তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বও এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল বলে মনে করছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

    ২০১৬ সালের বিধানসভা থেকে ’২৪-এর লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত রাজ্যে একাধিক বার বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেস সেই জোট-রাস্তায় থাকবে কি না, সে ব্যাপারে অবশ্য স্পষ্ট জবাব দেননি শুভঙ্কর।

    তবে বিধানভবন পথ বদলাতে পারে বলে ইঙ্গিত পেয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী রবিবার বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ও বিজেপি-র বিরুদ্ধে সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কংগ্রেস নেতৃত্ব নিশ্চয়ই এই বিষয়টি বুঝেই চলবেন। তবে ওঁরা কী করবেন, সেটা ওঁদের বিষয়।’

    অধীর-জমানায় বাম-কংগ্রেস জোট আদতে বিজেপি-কে অ্যাডভান্টেজ দেওয়ার জন্যই হয়েছে বলে তৃণমূলের দীর্ঘদিনের অভিযোগ। জোড়াফুল শিবিরের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ এ দিনও অধীরকে বাম-কংগ্রেস জোটের জন্য দুষেছেন। শুভঙ্কর সভাপতি হওয়া প্রসঙ্গে এক্স-এ কুণাল এ দিন লেখেন — ‘নতুন প্রজন্মের কেউ দায়িত্ব পেলে দেখতে ভালো লাগে। আশা করি, বঙ্গ-রাজনীতির বাস্তবতা শুভঙ্করের পদক্ষেপে প্রতিফলিত হবে।’

    অধীর অবশ্য এ দিনও চেনা ঢঙে তীব্র তৃণমূল-বিরোধিতা করেছেন। আরজি কর ইস্যুতে রবিবার হাওড়া শহরে বড় মিছিল করে তৃণমূল সরকারের সমালোচনা করেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর।
  • Link to this news (এই সময়)