• পাঁচদিন পরও জলমগ্ন পাঁশকুড়া, ত্রাণই ভরসা
    বর্তমান | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • শ্রীকান্ত পড়্যা, পাঁশকুড়া: রবিবারও পাঁশকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। শহরের স্টেশন বাজারে রাস্তার উপর জল জমে রয়েছে। গোবিন্দনগর পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ এলাকা এখনও জলের তলায়। বানভাসিদের কাছে ত্রাণই এখন ভরসা। প্রশাসনের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী এদিন পাঁশকুড়ার প্লাবিত এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়। পুজোর মুখে রবিবার পাঁশকুড়া শহরে বেশকিছু দোকানপাট খোলে। তবে এখনও অনেক দোকানের ভিতর জল জমে রয়েছে। এদিন দেখা যায়, অনেক দোকানের ভিতর জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে। ব্যবসায়ীরা সেসব বের করে দোকানঘর পরিষ্কার করছেন। কেউ কেউ দোকানে জমা জল থালা, গামলা দিয়ে বের করেন। বন্যার ধাক্কা কাটিয়ে দ্রুত স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার মরিয়া চেষ্টা চলছে।


    এদিন পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে রানিয়াড়া, কয়া, মঙ্গলদ্বারি প্রভৃতি গ্রামে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করা হয়। কোলাঘাট ন্যাশনালিস্ট ঠিকা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এনডিআরএফের স্পিডবোটে দর্গতদের ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়। বুকসমান জলে দাঁড়িয়ে মাথায় গামলা নিয়ে বানভাসীরা ত্রাণ সংগ্রহ করেন। সড়কপথে ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি আটকে জোর করে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। বাধ্য হয়ে অনেক সংস্থা স্পিডবোট নিয়ে সরাসরি দুর্গত এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। 


    রবিবার ঘাটালের সাংসদ দেব পাঁশকুড়া বিডিও অফিসে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন। বন্যার জল নামার পর জলবাহিত রোগের প্রকোপ ছড়াতে পারে। সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি নিয়ে আলোচনা হয়। এদিন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী এবং সেচদপ্তরের পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে মানুরে কংসাবতী নদীবাঁধ মেরামতের কাজ পরিদর্শনে যান। মোট চারটি জায়গায় নদীবাঁধ ভেঙেছিল। আবারও নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার আগে প্রতিটি বাঁধ মেরামতের কাজ শেষ করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।


    পাঁশকুড়া স্টেশনে স্টাফ স্পেশাল ট্রেন এখন জিআরপি থানা। জিআরপি ওসি সন্দীপ চট্টোপাধ্যায় সহ ১৭জন অফিসার ও কর্মী রেল কামরায় বসে ডিউটি করছেন। শুধু জিআরপি থানা নয়, ওই স্টাফ স্পেশাল ট্রেনের কামরা এখন অস্থায়ী রেল কোয়ার্টারও। বন্যায় রেল কোয়ার্টার প্লাবিত হওয়ার পর ওই কামরায় আশ্রয় নিয়েছেন রেলকর্মী ও তাঁদের পরিবার। গত বুধবার থেকে পাঁশকুড়া স্টেশনে ৬নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো ওই ট্রেন রেলকর্মী ও তাঁদের পরিবারের মাথা গোঁজার আশ্রয়স্থল। প্রচণ্ড গরমে কামরার মধ্যে কাহিল অবস্থা। বন্যা দুর্গতদের মতো তাঁরাও বেশ কষ্টে আছেন।


    পাঁশকুড়া স্টেশনে জিআরপি থানা এবং রেল কোয়ার্টার মান্ধাতার আমলের। নদীবাঁধ ভাঙার দিনই বন্যায় ওইসব কোয়ার্টারে বুকসমান জল জমে। কর্মী ও তাঁদের পরিবার পরিজন বেরিয়ে এসে স্টেশনে আশ্রয় নেন। তারপর খড়্গপুর ডিভিশন থেকে স্টাফ স্পেশাল ট্রেন পাঠানো হয়। বুধবার থেকে তার দু’টো কামরাজুড়ে অস্থায়ী জিআরপি থানা। অভিযোগ জানাতে ওই কামরায় যেতে হচ্ছে। মোট ১৭জন জিআরপি অফিসার-কর্মী রয়েছেন। অন্যান্য‌ কামরায় কোয়ার্টারে থাকা রেলকর্মী ও তাঁদের পরিবার রয়েছে। খড়্গপুর থেকে তাঁদের প্রত্যেকের জন্য খাবার, টিফিন আসছে। আবার কেউ কেউ রান্না করছেন। রবিবার জিআরপি থানা থেকে জল নেমেছে। তবে পুরোপুরি চালু হতে আরও কয়েকদিন লাগবে। একই ছবি রেলের কোয়ার্টারগুলিরও।


    (জলমগ্ন পাঁশকুড়া শহর। নিজস্ব চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)