ইন্দ্রজিৎ কর্মকার, কান্দি: বর্গি নেই। মাঠের পর মাঠের ধান লুট হয় না। কিন্তু আগলদার প্রথা এখনও কান্দি মহকুমায় রয়ে গিয়েছে। বীজ বপন থেকে ধান কাটা পর্যন্ত তাঁরা মাঠ পাহারা দেবেন। তাঁর বিনিময়ে পাবেন ধান। এখন নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। আর কয়েকদিন পর তাঁরা মাঠে নামবেন।
প্রবীণ চাষিদের কাছে জানা গিয়েছে, একটা সময় আমন ধান বুনে নিশ্চিন্ত থাকতে পারতেন না জমি মালিকরা। ধান পাকলেই মাঠ থেকেই ধান চুরির সম্ভাবনা থাকত। আর ধান পাকার আগে গবাদি পশু ধান খেয়ে নিত। মালিকদের সবসময় জমি পাহারা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। সময়ও ছিল না। তাই গ্রামে গ্রামে মাঠ পাহারাদার বা আগলদার নিয়োগ করা হতো। আমন ধান বোনার সময়ই গ্রামের জমি মালিকরা সন্ধ্যায় বৈঠকে বসে পাহারাদার নিয়োগ করতেন। তাতে দু’জন থেকে ১০জন পর্যন্ত এক একটি গ্রামে পাহারাদার নিয়োগ করা হতো। আমন ধান উঠলে পাহারাদাররা কাঠাপিছু চার আঁটি থেকে ছয় আঁটি পর্যন্ত শিষ ধান নিতেন। এভাবেই পাহারাদারদের বছরের কয়েক মাসের খাবারের ব্যবস্থাও হয়ে যেত।
কিন্তু এখন সেসব দিন নেই। আমনের মাঠের ধান চুরির ঘটনা গত কয়েকবছর দেখা যায়নি বলে চাষিরা জানিয়েছেন। তবুও এই প্রথা আজও বিভিন্ন গ্রামে চালু রয়েছে। খড়গ্রাম ব্লকের ঝিল্লি গ্রামে চাষি জসিমউদ্দিন রহমান বলেন, ধান চুরি না হলেও এই সামাজিক প্রথাকে আমরা ভুলতে পারি না। এই প্রথা চালু থাকলে জমি মালিক সহ কয়েকটি পরিবারের অন্নসংস্থানও হয়। তাই এই এলাকার গ্রামগুলিতে আজও মাঠ পাহারাদার প্রথা চালু রয়েছে।
তবে কান্দি ব্লকের হিজল পঞ্চায়েত এলাকার অধিকাংশ গ্রামে পাহারাদার প্রথা উঠে গিয়েছে। স্থানীয় আমিত্যা কৃষি সমবায় সমিতির বোর্ড সদস্য মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এই এলাকায় আর ধান চুরির ঘটনা একেবারে নেই। কাজেই মাঠ পাহারাদার প্রথা একেবারে উঠে গিয়েছে। এর কারণ হল মানুষের অভাব অনেকটাই দূর হয়েছে। ভরতপুর-১ ব্লকের শেরপুর গ্রামের শেরফুল হক বলেন, আগে আমাদের ক্লাব থেকে মাঠ পাহারাদার নিয়োগ করা হতো। তবে কয়েকবছর থেকে সেই প্রথা উঠে গিয়েছে। যদিও ভরতপুর-২ ব্লকের কাগ্রামের মাঠ পাহারাদার নবকুমার ঘোষ বলেন, এবছরও মাঠ পাহারাদার নিয়োগ করা হয়েছে। আমাদের এই মাঠে ছ’জনকে নিয়োগ করা হয়েছে কাঠাপিছু ছ’আঁটি ধানের বিনিময়ে।
একইভাবে বড়ঞা ব্লকের জাওভরি, কাটনা, বিপ্রশেখর, কুণ্ডল ইত্যাদি গ্রামগুলিতে মাঠ পাহারাদার নিয়োগ করা হয়েছে। নিয়োগপর্ব আরও দু’সপ্তাহ ধরে চলবে।