সরকারি সাহায্য পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা, অভিযোগ শোলা শিল্পীদের
বর্তমান | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি: বংশ পরম্পরায় তাঁরা হস্ত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। পুজোর সময় চাপ কিছুটা বাড়লেও কাজ অনুসারে মজুরি না মেলে না। যার জেরে আর্থিক পরিস্থিতির বদল হয় না। এই সুযোগে সাহায্য পাইয়ে দেওয়ার নাম করে প্রতারণা চলছে জলপাইগুড়ির শোলা শিল্পীদের। এমনই অভিযোগ তুলেছেন জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের খাড়িজা বেরুবাড়ি-২ নম্বর গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার মালকানি মালিপাড়ার শোলা শিল্পীরা। তাঁদের বক্তব্য, সারাবছর সেভাবে কাজ পান না। পুজোর সময় কিছুটা কাজ বাড়ে। তখন সাহায্য পাইয়ে দেবার নাম করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, কোনও কোম্পানীর প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে যায়। হস্ত শিল্পীদের প্রতারণার ঘটনা স্বীকার করেছেন জলপাইগুড়ি জেলা শিল্পকেন্দ্রের একাধিক আধিকারিক।
মালকানি বাজার থেকে ডান দিকে রাস্তা ধরে প্রায় এক কিমি এগোলে মালিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। আরও কিছুটা এগিয়ে দু’তিনটি বাঁশ ঝাড়ের নীচে বস্তা পেতে বসে একমনে শোলা কেটে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতে দেখা গেল কয়েকজনকে। বাঁশ ঝাড়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ধেয়ে এল প্রশ্নবাণ, কোথা থেকে এসেছেন? কেন এসেছেন? সংবাদমাধ্যমের কথা শুনে কিছুটা হলেও শান্ত হন তাঁরা। পুজোর আগে দম ফেলার ফুরসত নেই বলে আবার কাজে লেগে গেলেন। সেখানে কথা হল শিল্পী মণি মালাকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, পুজোর কারণে এবার কাজ বেশী এসেছে। প্রতিমার গায়ের অলঙ্কার, মাথার মুকুটের অর্ডার এসেছে। ডাকের সাজ ছাড়াও শোলার কদম সহ একাধিক জিনিস তৈরি করতে হচ্ছে। তবে এই ব্যস্ততা সারা বছরের জন্য নয়। আরএক শিল্পী মুকুন্দ মালাকার বলেন, এই কাজ করে সারা বছর চলে না। শোলার দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের মুখ দেখা দেখা যায় না।
মালিপাড়া এলাকায় প্রায় ৮৫টি পরিবার শোলার শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিটি পরিবারের কিশোর থেকে বৃদ্ধ সকলেই শোলা দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেন। কিন্তু, আর্থিক দুরাবস্থার সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ সরকারি সাহায্য পাইয়ে দেওয়া কথা বলে প্রতারণা করছে। শিল্পী মণি মালাকার বলেন, বাইরে থেকে বহু মানুষ আমাদের গ্রামে আসে। অনেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি পরিচয় দেয়। সরকারি প্রকল্পের আর্থিক অনুদান দেওয়া, হাতের কাজ বাইরে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার টোপ দেয়। সাহায্য পাইয়ে দেবার নাম করে শোলার সামগ্রী নিয়ে গেলেও কেউ হয় সেটার দাম দেননি, বা কেউ নামমাত্র টাকা দিয়ে চম্পট দিয়েছেন। পরবর্তীতে তাদের আগে গ্রামে টিকি পাওয়া যায়নি।
এই ব্যাপারে এসডিও তমোজিত্ চক্রবর্তী বলেন, শোলা শিল্পীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা নিশ্চই পাশে দাঁড়াবো। ওই এলাকায় গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা শিল্পকেন্দ্রের আধিকারিকদেরও বলা হবে। -নিজস্ব চিত্র।