• তৃণমূল গণতান্ত্রিক পরিবেশ রাখলে অযথা বিরোধতা নয়, মত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির
    বর্তমান | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: অধীর চৌধুরীকে সরিয়ে শুভঙ্কর সরকারকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির পদ দেওয়ার পর থেকেই আলোচনা চলছে, কোথাও কি ‘নরমপন্থী’ নেতাকে কংগ্রেস হাইকমান্ড বেছে নিয়েছে তৃণমূলের সঙ্গে ‘সংঘাত’ তৈরি করবে না বলেই? এই যাবতীয় চর্চা, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক আগামী আরও কিছুদিন চলবে, তা বলাই বাহুল্য। ঘটনাচক্রে দায়িত্বভার হাতে নেওয়ার পর প্রথম দিনে তৃণমূলের প্রতি তেমন সুর চড়াতেও দেখা গেল না নতুন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে। বরং তাঁর লক্ষ্য, কংগ্রেসের সংগঠনকে শক্তিশালী করা। যদিও এতে নিজের দলকে শক্তিশালী করতে গিয়ে সিপিএমের সঙ্গে সম্পর্কে ‘ছেদ’ পড়বে কি না, সেই প্রশ্নটাও উঠে গিয়েছে।


    শনিবার সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। সেইমতো রবিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শুভঙ্কর। এদিন রাজ্য কংগ্রেসের সদর দপ্তর বিধান ভবনে গিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মিলিত হন তিনি। সভাপতির চেয়ারে বসে প্রথম সাংবাদিক বৈঠকও করেছেন তিনি। শুভঙ্কর স্পষ্টভাবে বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁর এখন পাখির চোখ রাজ্য কংগ্রেসকে শক্তিশালী করা। প্রসঙ্গত, বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন দেড়-দুই বছরের মধ্যেই। ফলে এই সময়টাকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগিয়ে কংগ্রেসের পতাকাকে রাজ্যের সর্বত্র উড্ডীন করার চ্যালেঞ্জ নিয়েই ময়দানে নেমেছেন ছাত্র সংগঠন থেকে উঠে আসা এই নেতা।


    ফলে এটা স্পষ্ট, নতুন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এখন কোনোভাবেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তেড়েফুঁড়ে নামবেন না। বরং ধীরে চলো নীতি নিয়েই এগবেন তিনি। এখানেই শুভঙ্করকে আগামী দিনের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, শুভঙ্কর সরকার কঠিন কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন, তাঁর জন্য শুভেচ্ছা থাকল। আশা করি, বঙ্গ রাজনীতির বাস্তবতা শুভঙ্করের পদক্ষেপে প্রতিফলিত হবে।


    রাজনৈতিক পরিসরে বলা হয়ে থাকে, শুভঙ্কর সরকার কোনোভাবেই অধীর চৌধুরীর মতো ‘কট্টোরপন্থী’ নন। তৃণমূল ও রাজ্য সরকারের বিরোধিতা প্রতিদিনই করে গিয়েছেন অধীর। ঘটনাচক্রে শুভঙ্কর যেদিন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির চেয়ারে বসেছেন, প্রায় সমসাময়িক সময়ে হাওড়ায় মিছিল করেছেন অধীর চৌধুরী। হাওড়া ময়দান ফাঁসিতলা মোড় থেকে শিবপুর কাজিপাড়া পর্যন্ত আর জি করের ঘটনায় দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মিছিল করেন অধীর। পদ চলে যাওয়া প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, কেউ পদাধিকারী হয়ে এক জায়গায় চিরস্থায়ী হতে পারেন না। কংগ্রেস হাইকমান্ড সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। 


    এখানে আরও একটি বিষয় রাজনীতির আলোচনায় উঠে এসেছে যে, কংগ্রেস-সিপিএম সম্পর্ক আগামী দিনে কোথায় গিয়ে ঠেকবে? কারণ অধীর বরাবরই সিপিএম’কে সঙ্গে নিয়ে এগনোর পক্ষপাতী ছিলেন। এখানে শুভঙ্কর সরকারের বক্তব্য, ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূল ও সিপিএম আছে। এরাজ্যে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হয়েছিল, তৃণমূলের সঙ্গে হয়নি। এখন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের মত একত্র করেই আমি আগামী দিনে দল পরিচালনা করব। 


    ফলে এখন থেকে সিপিএম নজর রাখবে, আগামী দিনে কংগ্রেস কী পদক্ষেপ করছে। এক্ষেত্রে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, আমাদের লড়াই বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জাতীয় কংগ্রেস কাকে কোন পদে বসাল, তা আমাদের চিন্তার বিষয় নয়। কংগ্রেস হাইকান্ড যা নির্দেশ দেবেন, সেটাই তো রাজ্য কংগ্রেস মেনে চলবে।
  • Link to this news (বর্তমান)