ট্রলার দুর্ঘটনা: প্রথমবার সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ফেরা হল না ১৯ বছরের সৌরভের!
বর্তমান | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, কাকদ্বীপ: প্রায় ২০ বছর ধরে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যান কাকদ্বীপের ৮ নম্বর কালীনগর মাইতির চকের বাসিন্দা সুফল দাস। এখন তিনি কেরলে মাছ ধরার কাজই করেন। ছোট থেকে বাবাকে এভাবেই পরিশ্রম করতে দেখেছেন সুফলবাবুর বড় ছেলে সৌরভ। অভাবের সংসার। তাই মাধ্যমিক পাশ করার পর রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু কোভিড-কালে লকডাউনের পর থেকে আর্থিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে তাঁদের পরিবার। শেষ পর্যন্ত ১৯ বছরের তরতাজা তরুণ সৌরভ সিদ্ধান্ত নেন, বাবার মতো ট্রলারে করে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাবেন তিনিও। ছেলের সেই সিদ্ধান্তে প্রথমে রাজি ছিলেন না বাবা-মা। কিন্তু পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ও বাড়তি কিছু রোজগারের আশায় সৌরভ প্রথমবার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন। ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে এটাই হয়ে গেল তাঁর শেষবারের মতো সমুদ্রযাত্রা!
মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য গত বুধবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সৌরভ। যাওয়ার আগে মা তাঁকে বলেছিলেন, ‘সাবধানে থাকিস।’ বাবা কেরল থেকে ফোন করে ছেলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন তাঁর এতদিনের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান। বলে দিয়েছিলেন বিপদে পড়লে উদ্ধার পাওয়ার কিছু কৌশলও। কিন্তু কিছুই কাজে এল না! শুক্রবার গভীর রাতে মাঝসমুদ্রে ডুবে যায় এফ বি গোবিন্দ ট্রলার। রবিবার উদ্ধার হয় সৌরভের মৃতদেহ। ট্রলার দুর্ঘটনার কথা শুনে শনিবার রাতেই কেরল থেকে বাড়ি ফিরেছেন সুফলবাবু। এখন বুকফাটা হাহাকারই তাঁর সম্বল।
কৈলাসনগরের আরেক মৎস্যজীবী নিখিল দাস এই ট্রলারে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। তাঁর পরিবারে রয়েছে স্ত্রী ও দুই ছেলে। দুই ছেলেকে ভালোভাবে শিক্ষিত করা ছিল তাঁর স্বপ্ন। সমুদ্রে রওনা হওয়ার দিন স্ত্রীকে তিনি বলে গিয়েছিলেন, ‘ছেলেদের দেখাশোনা করো। স্কুল যাওয়া যেন বন্ধ না করে।’ নিখিলবাবুর মৃত্যুতে দুই ছেলেকে নিয়ে এখন দিশাহারা তাঁর স্ত্রী। মাইতির চকের বাসিন্দা জগবন্ধু দাস ৬০ বছর বয়সেও পরিবারের সবাইকে ভালো রাখতে এই ট্রলারে করে সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছিলেন। তাঁরও আর ফেরা হয়নি! - নিজস্ব চিত্র