• পুজোর বাজারে ‘অসুর’ মিছিল, ড্রিবল করেই কেনাকাটি ক্রেতাদের
    বর্তমান | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘আসুন, আসুন। মেয়েদের টপ, সালোয়ার, দোপাট্টা’—হকারদের হাঁকডাক চলছে। হঠাৎ আচমকা সে আওয়াজ ছাপিয়ে উড়ে গেল মাইকে-‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান। হকাররা হতাশ হয়ে বসে পড়ে বলেন, ‘আজকের দিনটাও গেল।’ সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ পুজোর বাজার যখন থার্ড গিয়ারে উঠে স্পিড নিয়েছে ঠিক তখনই মিছিলে স্তব্ধ গড়িয়াহাট। 


    রুবি থেকে এল একটি মিছিল। তারপর ঢাকুরিয়া থেকে আর একটি মিছিল ঢুকল। দু’টি মিছিল থমকে দিল বাজার। কেনাকাটা প্রায় লাটে। গড়িয়াহাট মোড়ে মিছিলকে ড্রিবল করে কোনওক্রমে ফুটপাতে ঢুকলেন ক্রেতারা। কেনাকাটা করলেন। গজগজও করলেন আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। গড়িয়াহাট শুধু নয়, শ্রীরামপুরের ছবিটাও একইরকম। আর জি কর কাণ্ডে বিচার চেয়ে সন্ধ্যায় ৪১ কিমি দীর্ঘ মানববন্ধন পালন করল হুগলির একটি নাগরিক মঞ্চ। শ্রীরামপুর বটতলায় সন্ধ্যাবেলায় জমায়েত করে উত্তরপাড়া থেকে ব্যান্ডেল পর্যন্ত মানববন্ধন হল। আর গড়িয়াহাটে হাতে ভারতের পতাকা নিয়ে মিছিলে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেল কয়েকজন সিপিএম নেতাকে। 


    বেহালা থেকে গড়িয়াহাটে বাজার করতে এসেছিলেন সুব্রত আচার্য। কেনাকাটার পর বাড়ি ফিরবেন। হাতে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘অটো করে ফিরব। কিন্তু কখন পাব কে জানে? মিছিলের সব দাবিই বুঝলাম। কিন্তু এত মানুষজন বেরিয়েছেন তাঁদের হয়রানিতে ফেলার কোনও মানে হয়?’ তাপস হালদার নামে গড়িয়াহাটের এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘ব্যবসা না হলে মহাজনের টাকা কি করে শোধ করব বলুন তো! মিছিলের জন্য লোকজন কিনতে আসতেই ভয় পাচ্ছেন।’ বস্তুত তাই ঘটল। শহরতলি থেকে গড়িয়াহাটে এসে কেনাকাটা করার পর বাড়ি ফিরতে বালিগঞ্জ থেকে ট্রেন ধরেন অধিকাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ‘হেঁটে বালিগঞ্জে যেতেও সমস্যা হচ্ছে।’ কাকলি দাস নামে সোনারপুরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘এখন তো কলকাতায় আসাটাই সমস্যার। কখন মিছিল আছে জেনে তবে আসতে হবে।’ সমস্যায় পড়ছেন শহরে থাকা ক্রেতারাও। অ্যাপ ক্যাব গড়িয়াহাট পর্যন্ত আসতে নারাজ। ফলে অনেকে ‘শপিংয়ের প্ল্যান ক্যানসেল’ করেছেন বলে জানালেন।


    বারুইপুরের বাসিন্দা সুমনা কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে বাজার করতে এসেছিলেন। তাঁর বাবা সমানে ফোন করে বলছেন, ‘দেরি হচ্ছে কেন?’ ফোন কানে নিয়ে সুমনা বাবাকে বুঝিয়েই চলেছেন, ‘মিছিল বেরিয়েছে। স্টেশনে যেতে পারছি না।’ কেউ কেউ আবার ‘উইন্ডো শপিংয়ে’ বেরিয়েছেন। তাঁরা মিছিল দেখে খুশি। ফোন বের করে ভিডিও করলেন। ‘বাড়ি ফিরবেন কীভাবে?’ জিজ্ঞেস করতে উত্তর, ‘সামনেই থাকি। ফিরতে সমস্যা হবে না। দেখা হল। মিছিলও হল। রবিবার মন্দ কাটল না।’ 


    সবমিলিয়ে চরম সমস্যায় ক্রেতারা। মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের। তবে তাতে ভ্রুক্ষেপ করল না ‘জাস্টিস মিছিল’। এক হকারের বক্তব্য, ‘আমাদের জাস্টিস কে করবে বলুন তো?’
  • Link to this news (বর্তমান)