রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, বেশ কিছু এলাকায় নামছে জল
এই সময় | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এই সময়, উদয়নারায়ণপুর, খানাকুল ও ঘাটাল: রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনও হাওড়া, হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুরের অনেক এলাকাই জলমগ্ন। তবে বেশ কিছু এলাকা থেকে দ্রুত গতিতে নামছে জল।গ্রামে জল ঢুকেছে, এই খবর পেয়ে কলকাতা থেকে বাড়ি ফেরার পথে শনিবার তলিয়ে যান সমর মাইতি (২৬) নামে এক যুবক। তাঁর বাড়ি হাওড়ার জয়পুর থানার নকুবাড়ে। রবিবার সন্ধ্যায় সমরের দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ ও এনডিআরএফ। এই যুবককে নিয়ে বন্যা কবলিত গ্রামীণ হাওড়ায় মৃত্যু হলো চারজনের। মৃতদের মধ্যে মধ্যে তিনজন উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সমর কলকাতায় কাঠের কাজ করতেন। শনিবার বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। মুচিঘাটা-হাওড়া রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে জল বইছিল। সমর ওই জলে তলিয়ে যান। রবিবার সকাল থেকেই শুরু হয় উদ্ধারকাজ। সন্ধ্যায় মেলে তাঁর দেহ।ডিভিসি (দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন)-র ছাড়া জলে বুধবার থেকেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ও আমতা দু’নম্বর ব্লকে।
জমা জলে উদয়নারায়ণপুর ব্লকের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেঙেছে অসংখ্য রাস্তাঘাট। ক্ষতি হয়েছে ফসলের। উদয়নারায়ণপুর ব্লক থেকে অবশ্য রবিবারই জল নামতে শুরু করেছে। তবে এখনও জলমগ্ন আমতা দু’নম্বর ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েত। সেখানে ৩০টি শিবির খুলে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে, জানিয়েছেন আমতার বিধায়ক সুকান্ত পাল।
রবিবার বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে উদয়নারায়ণপুরের দেবীপুরে যান হাওড়ার জেলাশাসক পি দীপাপ্রিয়া। সঙ্গে ছিলেন উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীরকুমার পাঁজা। সেখান থেকে উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক মানসকুমার মণ্ডল, বিডিও পিন্টু ঘরামিকে নিয়ে জেলাশাসক আমতা দু’নম্বর ব্লকের ঝামটিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় যান।
এ দিকে মুণ্ডেশ্বরী নদী ও দামোদর এবং দ্বারকেশ্বর নদের জল অনেকটাই কমায় হুগলির গোঘাটের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে আরামবাগ ও পুরশুড়া ব্লকেরও। খানাকুলের পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সেখানকার বড় অংশ প্লাবিত হয়েছে রূপনারায়ণের জলে। পানশিউলি, মাড়োখানা, হানুয়ার মতো বেশ কিছু এলাকা এখনও জলমগ্ন। বন্ধ বাস চলাচল। খানাকুল ছাড়া আরামবাগ মহকুমায় বন্যা পরিস্থিতি মোটের উপর নিয়ন্ত্রণেই।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রবিবার আরামবাগ যান রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সঙ্গে ছিলেন কৃষিসচিব ওঙ্কার সিং মিনা, হুগলির জেলাশাসক মুক্তা আর্য, জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন ও আরামবাগের সাংসদ মিতালি বাগ। গোঘাটের পরিস্থিতিও এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। মুণ্ডেশ্বরীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে পুরশুড়া ব্লকের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছিল।
শ্রীরামপুর, পুরশুড়া ১, শ্যামপুর থেকে জল অনেকটাই নেমেছে। দামোদরের পাড় ভেঙে পুরশুড়ার চিলাডাঙি, আঁকড়ি শ্রীরামপুর, জঙ্গলপাড়ায় জল ঢোকার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও কিছু জায়গায় এখনও জল জমে রয়েছে।
পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। সেখানকার ডেবরা, কেশপুর, দাসপুর এলাকা থেকে জল কমেছে। জল নেমেছে ঘাটাল শহর থেকে। তবে ঘাটালের অজবনগর, ঘিসোরা, মনশুকা-সহ বিভিন্ন এলাকা এখনও জলমগ্ন। রবিবার বন্যা পরিস্থিতি ঘতিয়ে দেখতে ঘাটালেও যান মুখ্যসচিব। আসেন তৃণমূলের সাংসদ দীপক অধিকারী (দেব) ও মন্ত্রী জাভেদ খান।
এ দিন দুপুরে ঘাটালের ময়রাপুকুর ২ নম্বর চাতাল থেকে বোটে করে অজবনগরে গিয়ে দুর্গতদের হাতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেন। প্রশাসনের পাশাপাশি ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন সংস্থাও। জেলার কয়েক হাজার হেক্টর চাষের জমি এখনও জলের তলায়। যে সমস্ত জায়গায় নদী বাঁধ ভেঙেছে, সেখানে জমির উপর বালি জমেছে কয়েক ফুট।
মনোজ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন যা যা পদক্ষেপ করেছে, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। দশ লক্ষের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিছু জায়গায় এখনও নৌকোয় যাতায়াত করতে হচ্ছে। চাষের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। জল কমলে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।’
রবিবার থেকে জল নামায় পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। পাঁশকুড়া পুরসভার জন্দড়া, গোবিন্দনগরে কংসাবতী নদী বাঁধের ভাঙন মেরামতির কাজ চলছে জোরকদমে। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি জানিয়েছেন, বাঁধ মেরামতি কাজ দু’এক দিনের মধ্যে শেষ হবে। ধীর গতিতে জল নামার কারণে এখন ঘোষপুর, চৈতন্যপুর ১ও২, গোবিন্দনগরের বেশ কিছু অংশ এখন জলমগ্ন।