এই সময়: জমাটি থ্রিলার ছবির একেবারে শেষ দিকে এমন মোচড় থাকে। তাকে ‘টুইস্ট ইন দ্য টেল’ বলা হয়। থ্রিলার গল্পের সেই চমকে দেওয়া মোচড় প্রকৃতিও নিজের ভাঁড়ারে যথেষ্ট পরিমাণে জমিয়ে রাখে। সময়ে সময়ে তেমন ‘সারপ্রাইজ়’ সামনে এলে চুরমার হয়ে যায় আবহাওয়া সংক্রান্ত বহু বছরের রেকর্ড। রবিবার এমনটাই হলো দার্জিলিংয়ে।পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজি (আইআইটিএম) হিমালয়ের রানির আবহাওয়ার পরিসংখ্যান রাখতে শুরু করেছে ১৯৫১ থেকে। ৭৪ বছর পর ২০২৪-এ এসে সেই রেকর্ড এডিট করতে বসতে হলো আবহবিদদের। রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর দার্জিলিংয়ের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছলো ২৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত প্রায় সাড়ে সাত দশকে এর চেয়ে উষ্ণতম দিন দার্জিলিং আর একবার মাত্র দেখেছে। ১৯৭০-এর ২১ অগস্ট এখানকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ২৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
এতদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রিতে পৌঁছনোয় দ্বিতীয় স্থানে ছিল ১৯৭০-এরই ২২ অগস্ট। রবিবার শৈল শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠল ২৮.২ ডিগ্রিতে। ঘটনাচক্রে শনিবারও দার্জিলিংয়ের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রবিবারের মতো একই জায়গায়— ২৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মার্চের শেষ থেকেই এ বার তাপমাত্রা চড়তে শুরু করেছিল বাংলায়। এপ্রিলে সেটা চরম আকার নেয়। ওই সময়ে দক্ষিণবঙ্গে টানা ২২ দিন তাপপ্রবাহ চলেছিল। এপ্রিলে কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রিতে পৌঁছয় — ৭৪ বছরে সর্বোচ্চ। সল্টলেকে টানা ১৭ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির উপরে ছিল। মে-র মাঝামাঝি থেকে অবশ্য তাপমাত্রা সামান্য হলেও কমে যায়। ওই সময়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গাতেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পার করে। যদিও দার্জিলিংয়ের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওই সময়ে নতুন কোনও রেকর্ড করেনি।
চার মাস পর সেপ্টেম্বরের শেষ বেলায় এসে বাকি বাংলা পারদের উত্থানের নিরিখে যখন অনেকটাই ‘ঠান্ডা’, বেশির ভাগ জায়গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ থেকে ৩৫ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে — তখনই প্রকৃতির ‘টুইস্ট ইন দ্য টেল’। বেনজির উচ্চতায় দার্জিলিংয়ের তাপমাত্রা — ৭৪ বছরে দ্বিতীয় উষ্ণতম দিন। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সে ভাবে না-চড়লেও ভ্যাপসা গরমের দিনে-রাতে জেরবার হতে হচ্ছে।
সেপ্টেম্বরের প্রথম দু’সপ্তাহে পর পর দু’টো নিম্নচাপ বাংলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার পর ফের একটি নিম্নচাপের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। তার মাঝের দিনগুলোয় রাজ্যের আকাশে মেঘের লেশমাত্র নেই। একই সঙ্গে টানা বৃষ্টির পর বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার সংখ্যাও অত্যন্ত কম। এই কারণেই সূর্যের কড়া তাপ থেকে রক্ষার কোনও উপায় নেই। অন্য দিকে হিমালয়ের ঠান্ডা হাওয়াও এখনও নামতে শুরু করেনি। সব মিলিয়ে তাপমাত্রার এমন বেনজির চড়াই।
আবহবিদরা জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে আগেই একজোড়া ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছিল। আজ সোমবার সমুদ্রে দুই ঘূর্ণাবর্ত মিলে গিয়ে একটি নিম্নচাপ তৈরির সম্ভাবনা খুব বেশি। ওই নিম্নচাপ সৃষ্টির পর উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে দেশের মূল ভূখণ্ডের দিকে এগোতে শুরু করবে।
দার্জিলিংয়ে চড়া গরম (উষ্ণতম দশ)
* ২৮.৫ — ২১ অগস্ট ১৯৭০
* ২৮.২ — ২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
* ২৮ — ২২ অগস্ট ১৯৭০
* ২৭.৫ — ১৫ অগস্ট ১৯৭৮
* ২৭.৪ — ১২ অগস্ট ২০১৯
* ২৭ — ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫
* ২৬.৭ — ২১ অগস্ট ১৯৫৭
* ২৬.৫ — ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫
* ২৬.৩ — ১৪ অগস্ট ১৯৭৮
* ২৬ — ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
* ২৫.৭ — ৩০ মে ১৯৬৪
তথ্য — ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজি (পুনে)