• কন্যা দিবসে শুধু হাহাকারই সঙ্গী, শেষ বিচারের দিকে তাকিয়ে মৃতার পরিবার
    বর্তমান | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: সমাজমাধ্যমে শুভেচ্ছার বন্যা। বেড়াতে যাওয়া, অভিজাত রেস্তরাঁয় স্পেশাল খাওয়া-দাওয়ার ছবি ও ভিডিওতে ভরে উঠেছে সমাজমাধ্যমের দেওয়াল। মেয়ের পাশে হাসিমুখের ছবি পোস্ট করছেন সেলেব থেকে সাধারণ মানুষ। জাতীয় কন্যা দিবসে দেশজুড়ে উৎসবের আবহ। তারই মাঝে একরাশ শূন্যতা ও হাহাকার নিয়ে দিনযাপন করছেন সোদপুর নাটাগড়ের চিকিৎসক পরিবার। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে আসছে অভিশপ্ত ৯ আগস্টে মেয়ের নিথর দেহের ছবি। বার বার চোখের কোন ভিজে উঠছে। হাসপাতাল থেকে ফেরা মেয়ের সেই ‘বাবা ও মা’ বলে ডাক বার বার  ফিরে আসছে স্বপ্নে। বিনিদ্র রজনী কাটানো হতভাগ্য বাবা ও মা  হাহাকার করে বলছেন, আমার মেয়ের তো কোনও অপরাধ ছিল না। ও কারও ক্ষতি করেনি। ও শুধু ভালো ডাক্তার হতে চেয়েছিল। আমাদের জীবন ও জগৎটাকে কেন এভাবে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দেওয়া হল? চার দেওয়ালের অন্ধকার ঘরে আর্তনাদের উত্তর মেলেনি। বার বার শুধু ফিরে এসেছে বুক ফাটা কান্না ও চোখের জল।


    ৯ আগস্ট সকালে আর জি কর থেকে মেয়ের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। সদাব্যস্ত মেয়ে সামান্য খাবার খেয়েই দৌড়ত সোদপুর ট্রাফিক মোড়-সহ একাধিক চেম্বারে। তারই প্রস্তুতি রাখতেন মা। মেয়ের মুখের সামনে তুলে ধরতেন পছন্দের খাবারের প্লেট। প্রতি মুহূর্তে মেয়ের স্বাচ্ছন্দ্যের খোঁজ নিতেন বাবাও। কয়েকমাস আগেও বাইকের পিছনে চাপিয়ে ডাক্তার মেয়েকে পৌঁছে দিতেন চেম্বারে। একমাত্র কন্যা সন্তানকে তাঁরা তৈরি করেছিলেন প্রকৃত মানুষের মতো। কন্যাসন্তানের গর্বিত পিতা-মাতা মেয়ের বৈবাহিক জীবনের প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছিলেন। শুধু কি তাই? সামনেই মায়ের অকালবোধন। দু’বছর আগে মেয়ে জেদ করে বাড়িতে শুরু করেছিল জগজ্জননীর আরাধনা। এবার তার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছিল। চারদিন পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে আনন্দে মেতে থাকত মেয়ে। পাড়ার ঠাকুমা, পিসিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতেন কোলেপিঠে মানুষ হওয়া মেয়েটির মুখের দিকে। মাঝেমাঝে জগজ্জননীর মুখের সঙ্গে পরিবারের ডাক্তার মেয়েটির মুখ যে গুলিয়ে যেত। সকলেই বলতেন, এ তো সাক্ষাৎ দেবী! 


    কিন্তু ৯ আগস্ট সকালের একটি ফোনই বদলে দিয়েছে সোদপুর নাটাগড়ের ওই চিকিৎসকের পরিবারের দৈনন্দিন জীবনযাপন। মৃতার বাবা-মা বলেন, ৯ আগস্ট সকালের একটি ফোন ভয়ঙ্কর টর্নেডোর মতো আমাদের সাজানো সংসার ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। তারপর থেকে রাত-দিন-বারের হিসেব গুলিয়ে গিয়েছে। আমার সোনার প্রতিমার মতো মেয়েটাকে তো ওরা নৃশংসভাবে খুনই করল। এখন শুধু শেষ বিচারটা দেখতে চাই।
  • Link to this news (বর্তমান)