তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের তদন্ত প্রক্রিয়াকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছে সিবিআই—১) তথ্য-প্রমাণ লোপাট, ২) বৃহত্তর ষড়যন্ত্র এবং ৩) খুন। আবার প্রমাণ লোপাটের ক্ষেত্রে টালা থানার ওসি সহ অন্য পুলিস কর্মীরা জড়িত কি না, সেটাও ছাঁকনিতে রয়েছে তাদের। পাশাপাশি, তদন্তের আরও একটি অ্যাঙ্গেল হল, হাসপাতালের ভূমিকা। পুলিস ও হাসপাতাল মিলে যদি প্রমাণ লোপাট করে থাকে, তার যোগসূত্র লুকিয়ে আছে এই অ্যাঙ্গেলেই। এক্ষেত্রেও কল ডিটেইলস ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তাদের অস্ত্র। সেটা সুপ্রিম কোর্টে এজেন্সি জানিয়েও রেখেছে। তদন্তকারী অফিসাররা দাবি করেছেন, সেখানে নাকি এমন কিছু ফাঁক আছে, যা তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। শিয়ালদহ আদালতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি বারবার মোবাইলের কল ডিটেইলস ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজের প্রসঙ্গ টেনে এনেছে। খুনে একাধিক ব্যক্তির উপস্থিতি নিয়ে লাগাতার যে দাবি সিবিআই করে আসছে, সেক্ষেত্রেও তাদের ভরসা সেই মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ও বিভিন্ন তলার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। সন্দীপ ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তির কল ডিটেইলস বের করে চলছে বিশ্লেষণ। তাঁদের একাধিকবার জেরাও করা হয়েছে। কিন্তু তাঁরাই যে খুন করেছেন, বা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন—তার কোনও সূত্র ফুটেজ থেকে পাওয়া যায়নি। যাঁদের ছবি পাওয়া গিয়েছে, তাঁরাও যে খুনের সঙ্গে জড়িত, তার সপক্ষে জোরালো প্রমাণও নেই এজেন্সির কাছে। এমনকী, ক্রস এগজামিনেশন করে কথা বের করার মুন্সিয়ানাও এখানে খাটছে না। নিজস্ব নেটওয়ার্ক না থাকায় তদন্তকারী অফিসারদের কাছে আসছে না কোনও গোপন খবরও। আর তাই ঘটনার দিন সন্দীপ ঘোষ ও টালার তৎকালীন ওসির মধ্যে বারবার ফোনালাপ সামনে রেখে ষড়যন্ত্রের ঘুঁটি সাজাচ্ছে সিবিআই। পাশাপাশি রয়েছে সন্দীপের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজনের লাগাতার কথোপকথন। কিন্তু ওসি সহ বাকিরা তথ্য-প্রমাণ লোপাট কিংবা ষড়যন্ত্রে জড়িত, এই তত্ত্বের প্রমাণ শুধুমাত্র কল ডিটেইলস বিশ্লেষণ করে কীভাবে সম্ভব? যে থানা এলাকায় হাসপাতাল, এমন একটা ঘটনার পর সেখানকার ওসির সঙ্গে কর্তৃপক্ষ ফোনে বারবার কথা বলবে, সেটাই স্বাভাবিক। সিবিআইয়ের অন্দরের একাংশও বলছে, এতবড় ঘটনার পর ওসি টালা ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ নিতে একাধিকবার ফোন করতেই পারেন। তার অর্থ এই নয় যে, তিনি প্রমাণ লোপাটের ষড়যন্ত্রের জন্য ফোন করেছেন। এটা প্রমাণ করতে গেলে তদন্তকারীদের দেখতে হবে ঘটনাস্থল থেকে কী কী ‘তথ্য’ গায়েব হয়েছে। তার তালিকাই এখনও তৈরি করে উঠতে পারেননি তদন্তকারী অফিসাররা। ফলে এখনও ওসি কিন্তু অ্যাডভান্টেজ পরিস্থিতিতেই আছেন। আর বাড়তি চাপে পড়েছেন সিবিআই অফিসাররা।