শিক্ষার মুক্তাঙ্গনে আহ্বান সিভিক ভলান্টিয়ারের, হীরা মাস্টারের উদ্য়োগে গর্বিত বলাগড়বাসী
এই সময় | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সুজয় মুখোপাধ্যায়| এই সময় অনলাইনসোনা, মুক্তো বা হিরের থেকেও বড় সম্পদ শিক্ষা, ছোটবেলা থেকে বেদবাক্যের মতো মানেন হীরালাল সরকার। তাই হাজার কাজের ব্যস্ততার মাঝেও দুঃস্থদের নিয়মিত পড়ান হুগলির বলাগড়ের এই সিভিক ভলান্টিয়ার। বিনামূল্যেই পাঠশালা চালান তিনি। আরজি কর কাণ্ড থেকে শুরু করে রাজ্যের সাম্প্রতিক একাধিক ঘটনায় যখন সিভিকদের 'সিভিক সেন্স' নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, সেই সময় অন্যরকম কাজ করছেন হীরালাল। হুগলির দুঃস্থ পড়ুয়াদের কাছে হীরা মাস্টার ভরসার জায়গা। যোগ-বিয়োগ থেকে শুরু করে ইতিহাস, ভূগোল, মূল্যবোধ, সব বিষয়েই খুদেদের কাছে তিনি হিরের খনি।
হুগলির বলাগড়ের নাটাগরে এস টি কে কে রোডে ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্বে থাকেন তিনি। এলাকায় মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস। সন্তানদের জন্য গৃহশিক্ষক রাখার সামর্থ্য অনেকেরই নেই। তাঁদের জীবনের গাড়ি যাতে সঠিক পথে এগোয় সেই জন্যও দিক নির্দেশক এই সিভিক ভলান্টিয়ার।
রাস্তার পাশে পাটকাঠির বেড়া দিয়ে তৈরি করেছেন একটি চালা ঘর। সেখানেই প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন পড়ুয়া স্কুলে যাওয়ার আগে তাঁর কাছে পড়তে আসেন। আর এই পাঠশালা এলাকাবাসীর কাছে খুবই জনপ্রিয়। খুদেদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য সামান্য বেতনের টাকা থেকে বিস্কুট এবং লজেন্স কিনে দেন হীরালাল।
২০১০ সালে বলাগড় কলেজ থেকে তিনি বিএ পাস করেন। এরপর তিনি হুগলি গ্রামীণ পুলিশে বলাগড় থানার সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ পান। সকালে ট্রফিকের দায়িত্ব সামলে বিকেলে বাবার সবজির ব্যবসায় হাত লাগান। কিন্তু লক্ষ্য একটাই, অর্থাভাবে এলাকার যে খুদেরা স্কুলছুট হচ্ছে, মুখ ফেরাচ্ছে বইয়ের পাতা থেকে. তাঁদের পঠনপাঠনে ফেরানো।
স্থানীয় বাসিন্দা পাপিয়া সোরেন জানান, সকাল হলেই তিনি তাঁর মেয়েকে 'হীরার পাঠশালা'-য় পাঠান। মেয়েকে দশজনের একজন করতে তাঁর ভরসা পাড়ার ছেলে হীরালাল। যাঁকে নিয়ে এত চর্চা কী বলছেন তিনি? সিভিক ভলান্টিয়ার বলেন, 'আমার এলাকাটি আদিবাসী অধ্যুষিত। আমি চেষ্টা করি যেটুকু জানি তা ওদের শেখানোর। সমাজের উন্নতির জন্য শিক্ষাই হাতিয়ার।'
আর গ্রামীণ পুলিশের এই সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজে খুশি পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। হুগলি গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপি অভিজিৎ সিনহা মহাপাত্র বলেন, 'হীরালাল ছোটদের শিক্ষিত করার চেষ্টা করছেন, মহৎ কাজ। গত ছয় মাস ধরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি এই পাঠশালায় পড়াচ্ছেন। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।' হুগলি গ্রামীণ পুলিশের সুপার কামনাশিস সেন বলেন, 'আমাদের তরফে হীরালালকে শুভেচ্ছা।' বলাগড় থানার ওসি রাজকিরণ মুখোপাধ্যায় হীরালালকে তাঁর উদ্যোগের জন্য সম্বর্ধনা দেন।