• গঙ্গার ভাঙনে বিপর্যস্ত সামশেরগঞ্জ, আতঙ্ক
    বর্তমান | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর ও সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: মুর্শিদাবাদের প্রতাপগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের লোহরপুর গ্রামের অনেকটাই গিলেছে গঙ্গা। গ্রামের বাকি অংশ ঝুলছে নদীর পাড়ে। অন্ধকার নামলেই ফের করালগ্রাস শুরু হবে। চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে বলছিলেন মহেশ মণ্ডল। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ সামশেরগঞ্জের লোহরপুরে একাধিক বাড়ি সহ একটি জামে মসজিদের একাংশ হুড়মুড়িয়ে নদীতে ভেঙে পড়ে। আতঙ্কিত এলাকাবাসী ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ কয়েক মিটার এলাকা নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। আতঙ্কিত এলাকাবাসী ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেন। স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল শেখ বলেন, বাড়িঘর থাকতেও আজ আমরা যাযাবর। জিনিসপত্র যেটুকু পেরেছি বের করেছি। 


    জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেল থেকেই লোহরপুরে ভাঙন শুরু হয়। রাত যত গভীর হয়, ভাঙন ততই ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। রাতে গ্রামের প্রায় ৯০ বছরের পুরনো একটি মসজিদের একাংশ ভেঙে পড়ে। পাশের আরও তিনটি বাড়ি তলিয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে এলাকাজুড়ে হাহাকার আর কান্নার রোল ওঠে। মসজিদের প্রায় অর্ধেকটা খাদের কিনারে ঝুলতে। বাকি অংশ তলিয়ে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। মসজিদটিতে শনিবারই শেষবারের মতো নামাজ পড়েন এলাকাবাসী। মসজিদের ইমাম রফিকুল ইসলাম বলেন, অর্ধেক মসজিদ নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। অবশিষ্ট অংশ যে কোনও মুহূর্তে তলিয়ে যেতে পারে। সবাই আতঙ্কে রয়েছি। স্থানীয় প্রৌঢ়া তাজকেরা বেওয়া বলেন, খেয়ে না খেয়ে কোনওরকমে মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকু করেছিলাম। সেই আশ্রয়টুকু নদীতে তলিয়ে যেতে বসেছে। এখন কোথায় যাব, বুঝতে পারছি না।


    ফরাক্কা ব্যারেজে ডাউন স্ট্রিম ও আপস্ট্রিমে গঙ্গায় ব্যাপকভাবে জলস্তর বাড়ছে। যার ফলে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ফরাক্কা, সূতি-১ ও ২, সামশেরগঞ্জ, রঘুনাথগঞ্জ-২, লালগোলা ব্লকে জলস্তর বৃদ্ধি হওয়ায় রাতেই সর্তকতা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি ধুলিয়ান পুরসভা এলাকাতেও নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। নদীর জল বাড়ছে, নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার জন্য সর্বত্রই মাইকিং করা হচ্ছে। 


    জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, লালগোলা এবং নিমতিতায় কিছুটা পরিমাণে ভাঙন হয়েছে। গঙ্গার জলস্তর বেড়েছে ঠিকই। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে গঙ্গা ও ভাগীরথীর জলস্তর নামবে বলে আমরা আশা করছি। কিছু চাষের জমি জলমগ্ন রয়েছে। বাংলা শস্যবিমার মাধ্যমে চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সামশেরগঞ্জ ব্লকের বিডিও সুজিতচন্দ্র লোধ বলেন, নদীতে জলস্তর বাড়ছে। ভাঙনও হচ্ছে। কয়েকটি বাড়ি ও একটি মসজিদের একাংশ নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকাবাসীকে সতর্ক করা হয়েছে।


    জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, সরকারের সামর্থ মতো আমরা কাজ করছি। কেন্দ্র বরাবরের মতো উদাসীন। সামশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্র সংসার আর ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে বসেছেন। গঙ্গাভাঙন ও বন্যা ম্যানমেড।
  • Link to this news (বর্তমান)