বহু প্রাচীন শিবাক্ষ্যার পুজোকে ঘিরে আউশগ্রামের অমরারগড়ে উন্মাদনা
বর্তমান | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, মানকর: আউশগ্রাম-২ ব্লকের অমরারগড় গ্রামের শিবাক্ষ্যা পুজোর ইতিহাস বহু প্রাচীন। দুর্গাপুজোর সময়ই হয় এই পুজো। যাকে ঘিরে রয়েছে একাধিক বিশেষত্ব। এখানে মূর্তিটি দেখতে পুরো দুর্গার মতো। তবে সিংহের পরিবর্তে রয়েছে বাঘ। সঙ্গে আছে শৃগাল। গ্রামের রায় পরিবারের কুলদেবীর এই পুজো ঘিরে দুর্গাপুজোর সময় এলাকায় মহোৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়।
কথিত আছে, রাজা মহেন্দ্রর স্ত্রী রানি অমরাবতী একদিন কাটোয়ায় গঙ্গাস্নান করতে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি স্বপ্নাদেশে দেবী শিবাক্ষ্যার মূর্তি পান। তিনি এই মূর্তি তিনি নিয়ে আসেন। রাজা মহেন্দ্র এই মূর্তিটি অমরারগড়ে প্রতিষ্ঠা করেন। মহেন্দ্র ছিলেন ভল্লু রাজার বংশধর।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, এক সময় জঙ্গলে পরিপূর্ণ এই আউশগ্রামে সুরাটের কোনও এক রাজা সপরিবারে তীর্থভ্রমণে এসেছিলেন। তখন নাকি তাঁরা আটকে পড়েছিলেন। বনের মধ্যেই সন্তানসম্ভবা রানির প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। রানি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু জন্মের পর সেই সদ্যোজাত কোনও শব্দ করেনি। দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থা দেখে রাজা ভাবলেন সন্তান মৃত। বিষণ্ণ মনে তাঁরা মৃত সন্তান ফেলেই সেই স্থান ত্যাগ করলেন। পরের দিন স্থানীয় এক ব্রাহ্মণ জঙ্গলের ওই পথেই যাচ্ছিলেন। তিনি সদ্যোজাতর কান্নার আওয়াজ পেয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখেন একটি মেয়ে ভাল্লুক সদ্যোজাত শিশুটিকে পাহারা দিচ্ছে। সেই শিশুকে নিয়ে আসেন ব্রাহ্মণ। নাম রাখা হয় ভল্লুপদ। পরবর্তীকালে আউশগ্রাম জঙ্গলমহল ও তার আশপাশে রাজত্ব বিস্তার করেছিলেন ভল্লুপদ। তাঁর প্রপৌত্র হলেন রাজা মহেন্দ্র।
গ্রামের মাঝখানে শিবাক্ষ্যা মন্দির প্রতিষ্ঠিত। পুজো উপলক্ষ্যে মোষ বলির নিয়ম রয়েছে। কথিত আছে, এক প্রতিবেশী রাজা একবার দেবীকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আদিবাসীরা তাতে বাধা দেন। রাজা মহেন্দ্রর সঙ্গে যুদ্ধে সঙ্গ দেন তাঁরা। যুদ্ধে জয়লাভের পর মোষ বলি দেওয়া হয়। সেই রীতি আজও চলছে। মোষ বলির পর আদিবাসীরা নিয়ে যায় সেই প্রসাদ। রায় পরিবারের সদস্য রাজকুমার রায় বলেন, আগে অষ্টমীতে তোপধ্বনি করে বলি হতো। এখন তোপধ্বনি হয় না। তবে শব্দবাজির আওয়াজে বলি শুরু হয়। পরিবারের সদস্য শঙ্কু রায়, চিকিৎসক কাশীনাথ রায় বলেন, নবমীর দিন ব্রাহ্মণরা দেবীকে মন্দির থেকে বের করে মাথায় চাপিয়ে গ্রাম পরিক্রমায় যায়। একে শিবাক্ষ্যা নাচন বলে। বর্তমানে রায়রা অমরারগড়ে তিন জায়গায় বসবাস করেন। বড় মাঝের পাড়া, মেজ দক্ষিণ পাড়া ও ছোট উত্তর পাড়ায় বসবাস করেন। শিবাক্ষ্যা এস্টেট দেখাশোনা করছেন কৌশিক রায়। তিনি বলেন, পারিবারিক পুজোগুলিতেও সরকারি অনুদান পেলে ঐতিহ্য ও জৌলুস বজায় থাকে।