সিনেমার মতো চিত্রনাট্য সাজিয়ে প্রতারণা, জমি বিক্রির নাম করে টাকা লুট, এক মাসের চেষ্টায় ধৃত ৫ দুষ্কৃতী
বর্তমান | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: অবিকল সিনেমার চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছিল সেদিন। সিঙ্গুরে জমি কেনার জন্য হাওড়ার এক ব্যবসায়ীকে টাকা নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। বিক্রেতার কথা শুনে সেই ব্যবসায়ী এসেছিলেন। সবই ঠিকঠাক চলছিল। তারমধ্যেই আচমকা হানা দেয় পুলিস। অবৈধ লেনদেন চলছে, এই দাবি করে জমি বিক্রেতাদের ‘গ্রেপ্তার’ করে পুলিস। ব্যবসায়ী ও তাঁর সঙ্গীদের টাকা ও মোবাইল ‘বাজেয়াপ্ত’ করা হয়। পরে থানায় দেখা করতে বলে চলে যান পুলিস অফিসাররা। খানিক বাদে থানায় গিয়ে ব্যবসায়ী জানতে পারেন, পুলিস কোনও অভিযানই করেনি! সবটাই সাজানো। প্রায় একমাস ধরে তদন্ত চালিয়ে সম্প্রতি পাঁচজন প্রতারককে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে সিঙ্গুর থানার পুলিস। উদ্ধার হয়েছে কিছু টাকাও। কিন্তু অপরাধের ধরন ঘিরে চোখ কপালে উঠেছে তদন্তকারীদের।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রতারণা চক্রের মাস্টারমাইন্ড বিশ্বজিৎ বসাক ওরফে বাপ্পাকে বাগুইআটি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বাড়ি হুগলির শ্রীরামপুরে। ধৃত রহমান শেখ বর্ধমানের পূর্বস্থলীর, মোজাম্মেল শেখ হরিপালের, রণজিৎ মুখোপাধ্যায় চন্দননগরের ও অভিষেক সিংহ সিঙ্গুরের বাসিন্দা। চলতি মাসের শুরুতেই পুলিস রণজিৎকে প্রথম গ্রেপ্তার করে। তারপর একে একে বাকি চারজনকে কলকাতা, বর্ধমান ও হুগলির বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের আদালতে হাজির করে চারদিনের জন্য পুলিস হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। হুগলি গ্রামীণ পুলিস জানিয়েছে, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে টাকা উদ্ধার সহ বাকি তদন্ত করা হবে। নিরাপত্তার প্রয়োজনে হাওড়ার ব্যবসায়ীর পরিচয় পুলিস প্রকাশ করেনি। হাওড়ার ওই ব্যবসায়ী অবশ্য বলেন, প্রথমে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারিনি। পরে সন্দেহ হওয়ায় সিঙ্গুর থানায় যোগাযোগ করি। তখনই প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। পুরো সিনেমার কায়দায় প্রতারকরা ফাঁদ পেতেছিল। এখনও সেদিনের কথা ভাবলে আতঙ্ক হয়।
ঠিক কী হয়েছিল? পুলিস ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়ার ওই ব্যবসায়ী সিঙ্গুরে জমি কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর করছিলেন। সেই পর্বেই বাপ্পার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। এরপর জমি নিয়ে কথাবার্তার জন্য গত ২৫ আগস্ট তাঁকে সিঙ্গুরে ডেকে পাঠায় বাপ্পা। ওই ব্যবসায়ীকে নিয়ে বাপ্পা খাসের চক বেলতলায় একটি বাড়িতে যায়। জমির মালিককে সেখানে ১০ লক্ষ টাকা দিতে বলে। সেখানেই কথাবার্তা চলাকালীন পুলিস সেজে প্রতারক দলের সদস্যরা হানা দেয়। পরে জানা যায়, বেলতলার ওই বাড়িটি দু’ঘণ্টার জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছিল।